অভিমত
বইমেলার প্রাণটা আছে তো?

অমর একুশে গ্রন্থমেলার একদিন আগে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করল বাংলা একাডেমি। তাতে ব্যবচ্ছেদ যন্ত্রে ফেলেও বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী আয়োজনের কোনো ত্রুটি পেলেন না একজন সাংবাদিক। তা তিনি না পেতেই পারেন। অভিজিৎ রায়ের রক্তধোয়া বইমেলায় স্টল বন্ধ হয়, বই নিষিদ্ধ হয়, তাতে ওই সাংবাদিক কোনো ‘ব্যত্যয়’ খুঁজে পান না। আর একে স্বভাবতই বেশ ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিতে দেখেন একাডেমির মহাপরিচালকসহ অন্যরা। যেহেতু এখানে সমালোচনা নেই, আছে অযথা প্রশংসা।
৩০ জানুয়ারি বাংলা একাডেমির এই সংবাদ সম্মেলন এতটুকুতে থেমে গেলে সাংবাদিক হিসেবে নিজেই লজ্জা পেতাম। সেই লজ্জা কাটানোর সুযোগটা আমারও ছিল। তার আগেই দাঁড়ালেন জনা তিনেক সাংবাদিক। জানতে চাইলেন, কেন বইমেলায় বই নিষিদ্ধের দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের? প্রশ্ন নিতেই রাজি নন মহাপরিচালক। সংবাদ সম্মেলনে কথা থামিয়ে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের! তাহলে আর সাংবাদিকদের ডাকা হলো কেন? শুধু প্রশংসাবাক্য শোনার জন্য?
গেল বারও একাডেমির বইমেলায় কেন অভিজিৎ-দীপনকে স্মরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের সদোত্তর পাওয়া তো যায়নি, উল্টো ‘নাখোশ’ হয়েছিলেন মহাপরিচালক। এবারের মেলাতেও একাডমি স্মরণ করবে না সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ, শহীদ কাদরীকে। তারপরও মেলাতে কোনো ‘ব্যত্যয়’ পান না কোনো কোনো সাংবাদিক, গেল তিন বছর বইমেলায় বারবার বই আর স্টল নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও।
বিপরীতে যে সাংবাদিকরা প্রাণের মেলার প্রাণটা খুঁজে বেড়ান তাঁরা ‘ধমক’ খান। তবু তাঁরা থেমে থাকেন না। মুক্তচিন্তার পক্ষে থাকেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে থাকেন। সবশেষে বলতে চাই, হয়তো দিন দিন গঠন অনেক চমৎকার হচ্ছে বইমেলার, কিন্তু তার আত্মা কোথায়?
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, একাত্তর টিভি