মানবিকতা
এমন পুলিশই চাই

কিছু সদস্যের নানা রকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রায় সব সময় বদনাম বয়ে বেড়াতে হয় পুলিশকে। জনগণের বন্ধু নয়, এ রকম কথা তো প্রতিষ্ঠিতই। তবুও তার বাইরেও কিছু পুলিশ সদস্য হয়তো নিভৃতে কাজ করে যান মানবসেবায়। প্রচারের আশায় নয়, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তা যদি প্রচার পায়, নিন্দিত হয়, সে ক্ষেত্রে সৎ কিংবা মানবিক বোধসম্পন্ন একজন কর্মকর্তা কেন নন্দিত হবেন না? সে রকম এক পুলিশ অফিসার ইফতেখায়রুল ইসলামের কথা বলব। পেশায় একজন এএসপি হলেও পুরোদস্তুর সংস্কৃতিমনা। বিতর্ক, উপস্থাপনা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তাঁর সফল পদচারণা। তবে এর মধ্যে একটি অসাধারণ কাজ করলেন।
হারিয়ে যাওয়া একটা শিশু। ইমন। বয়স মাত্র তিন বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে। বাবা-মাকে হারিয়ে কেবল কাঁদছিল। তাকে কাছে পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায় ইফতেখায়রুল ইসলামের। পুলিশি পোশাকের কঠোরতার বাইরে তাঁর কোমলতা হয়তো ছুঁয়ে যায় শিশুটিকে। আধো আধো তথ্য দেয়। কিন্তু সে তথ্য তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করার মতো যথেষ্ট নয়। তখন ইফতেখায়রুল ইসলাম আশপাশের সব থানা, মসজিদে জানিয়ে দিলেন। ব্যবস্থা করলেন মাইকিংয়ের। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না।
সবশেষ তাই ফেসবুকে শিশুটির ছবিসহ পোস্ট দিলেন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্ট্যাটাসটি ২৩৩ বার শেয়ার হয়। ফেসবুকেই একজন জানান, রাজধানীর জুরাইন থেকে একটি শিশু হারিয়ে গেছে। তখন ইফতেখায়রুল ইসলাম সেই ছবিটি দেখাতে বললেন। হারানো শিশুটির ছবির সঙ্গে মিলে গেল। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে এলো বাবা-মা। সে অন্য রকম একমুহূর্ত।
ইফতেখায়রুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে ছোট্ট আদরের ধনকে হারিয়ে ফেলেছিলেন! তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে যা পেলাম, এ জীবনে এ প্রাপ্তির কাছে বাকি সব তুচ্ছ! ভালোবাসা ঠিক এখানেই...।’ ইমনের বাবা সাধারণ এক জেলে। কোনোমতে টেনেটুনে চলে সংসার। কিন্তু একজন বাবার কাছে সবকিছুই তাঁর সন্তান। এভাবে অনেক শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেউ কোনো বিপদে পড়লে, রক্ত লাগলে গিয়েছেন ছুটে।
ইফতেখায়রুল ইসলামের মতো মানবিকবোধসম্পন্ন যে কেউ হয়তো চেষ্টাটি চালাত। হয়তো ইমন খুঁজে পেত তার বাবা-মাকে। হয়তো নাও পেতে পারত। তবে এমন নীতিবান পুলিশ অফিসার সবাই চায়। কেবল দলের নয়, গোষ্ঠীর নয়; যাঁরা কাজ করবেন সবার জন্য। পেশায়, জাতি, বর্ণে যতই ছোট হোক; কাজ করবেন সেই মানুষটির জন্যও।
ইফতেখায়রুল ইসলামের মতো প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের মধ্যে থাকুক মানবিক বোধ। দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম। হয়তো বদলে যাবে দেশের চিত্র। অপরাধীরা সাজা পাবে। ভোগান্তিতে পড়বেন না সাধারণ কেউ।
লেখক : সাংবাদিক