রকিব ইসির বেহেস্ত নসিব করুন
হে আল্লাহ তোমার সদ্য প্রয়াত ইসিকে বেহেস্ত নসিব কর। তাঁদের জন্য সবার হয়ে আমি তোমার কাছে দোয়া চাইছি। তুমি ছাড়া এখন আর তাঁদের কেউ নেই। তাঁরা ইন্তেকাল ফরমাইছেন। তুমি তাঁদের করুণার চোখে দেখ। মোটামুটি দেশবাসী তাই করছে।
হে পরোয়ারদিগার তোমার অতি স্নেহ অনেক সময় তোমার মোমিনদের জন্য বিশেষ বিপদের কারণ হয়। যেমন হয়েছে রকিব ভাই ও তাঁর সদস্যদের। তিনি তো বেশ ভালো মানুষই ছিলেন এবং সবাই ওনাকে সৎ আমলা হিসেবেই জানতেন। যেটা অবশ্যই একটা বিরল ঘটনা। কেবল এই কারণেই কি তাঁকে ইসিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়? কিন্তু সেটা কি যথেষ্ট ছিল? আজকে সবাই তাঁকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে। সেটা তাঁদের জন্য কি সুখের বিষয়? এই চাকরিটা তুমি না দিলে তিনি ইজ্জত নিয়েই ঘরে ঘুমাতে পারতেন।
রকিব ভাইয়ের এই কাজটা করার মতো মাজার জোর আছে কি না সেটা কি কেউ দেখেছিল? নির্বাচন কমিশনার আর ডিসি নিয়োগ তো এক নয়।
সবাই তাঁকে বলছে মেরুদণ্ডহীন, কিন্তু এই নরম মেরুদণ্ডটা তাঁকে কে দিল?
তোমার যত সৃষ্টি তার মধ্যে অন্যতম বিস্ময়কর হচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যম। এমন কাজ তোমার দ্বারাই শুধু সম্ভব। যেখানে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। সেখানে একদল লোক লিখেছে, রকিব ভাই অনেক চমক দেখিয়েছেন। যেমন- ছোট বাচ্চাদের ভোটার বানিয়েছেন, সকালের মধ্যেই ভোটদান সমাপ্ত করেছেন, ভোটার না থাকলেও নির্বাচন সফল করিয়েছেন এবং বহু মানুষ হত্যা ও জখম হওয়ার পরও তিনি নির্বাচন চালিয়ে গেছেন। এগুলো তো অবশ্যই নেক আমল! শেষ বিচারের পাল্লায় এটা জিপিএ ৫ পাওয়ার মতো কাজ।
লোকে বলে, রকিব ভাইয়ের হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। তা না হলে নারায়ণগঞ্জের আগে কোনো ভালো নির্বাচন হলো না? ওই নির্বাচনের জন্য রকিব ভাইকে কেউ ক্রেডিট দিতে চায় না। সবাই বলে, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। কেবল তুমিই বলতে পার কোনটা ঠিক।
নতুন ইসি রকিব ভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরি কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সবাই রকিব ভাইকে ভালো মানুষ বললেও তাঁর নেতৃত্বাধীন ইসিকে যোগ্য বলার মতো নাফরমানি কেউ করবে না। আমরা বহু ইসিকে সামনে দিয়ে আসতে-যেতে দেখেছি। বহু নির্বাচনও পার হয়েছে। যেমন মাগুরা নির্বাচন, যেটাকে ‘নির্বাচন’ বলতে খাস রহমতের প্রয়োজন হয়। এটাকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা যায়, যা এখন বিতাড়িত। বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমের যুগে।
যাইহোক তোমার ইসিকে তুমিই উঠিয়ে নিয়ে গেছ, এটা তোমার ইচ্ছে। আশা করি রকিব ইসির বেহেস্ত নসিব হবে। সৌভাগ্য যে আমাদের ধর্মে পুনর্জন্ম নেই।
এখন আমরা নুরুল হুদার যুগে বাস করছি। তিনি শপথ গ্রহণ করার আগেই মিডিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছেন। বিরোধী দলও তাঁর অনেক নেক আমল স্মরণ করেছে। যেমন তিনি জনতার মঞ্চের নেতা, অর্থাৎ মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাগরেদ। আমরা নড়াচড়া মন্ত্রীর সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কারণ যত দিন রানা প্লাজার স্মৃতি বেঁচে থাকবে, তত দিন তাঁর বক্তব্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি যে আশরাফুল মাখলুকাতের বিশেষ তৌফিকপ্রাপ্ত একজন মন্ত্রী ছিলেন সেটা সবার জানা।
তবে সিইসি হুদা জনতার মঞ্চের লোক নন। তিনি হয়তোবা সরকারি দলের সমর্থক। কিন্তু আসল কথাটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সদস্য পদ আর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সদস্য পদ এক নয়, এটা নিশ্চয় তাঁর আমলে আছে।
রকিব ভাইয়ের বড় সমস্যা ছিল, তিনি ইসির চাকরিটাকে সচিবের চাকরির মতো করে দেখেছিলেন। দুটো যে এক নয় সেটা তিনি অনুধাবন করেছেন কি না তাঁর কাজ থেকে তা বোঝা যায়নি।
এই একটা চাকরি যার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়। সে কারণেই ওই পদটিতে যিনি বসেন তাঁর কাজের দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীও আছেন। তাই এ পদের ঝাঁঝ সহ্য করার মতো ক্ষমতা সবার হয় না। রকিব সাহেবের তাতে একটু ঘাটতি ছিল। হুদা ভাইয়ের ইসির সাফল্য আর ব্যর্থতা নির্ভর করবে এই বিষয়টা তিনি কতটা উপলব্ধি করছেন তার ওপর।
হে শেষ বিচারের মালিক, হুদা ভাইকে এই কথাগুলো অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। তা না হলে অন্য কিছু না হোক গালিগালাজ শুনতে হবে, হাসি-ঠাট্টার খোড়াকে পরিণত হতে হবে। গণতন্ত্র তো পরের কথা।
ভাই বিএনপি, গালি দিতে চান দ্যান, কিন্তু নির্বাচন করুন। ২০১৪ সালে বাইরে থেকে কোনো লাভ হয়নি, আগামী নির্বাচনে না এলে আপনারাও ইসির মতো মাজা ভেঙে পড়ে থাকবেন। আল্লাহ আপনাদের সবাইকে সুমতি দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক