গুলশান ৭/১
সন্ত্রাসী হামলা ও সামাজিক পরিবেশের দায়
কার্ল মার্কসের গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই আবার মনে করতে চাই জীবনধারার ছাপ চেতনাকে গড়ে, চেতনার ছাপ জীবনধারাকে নয়। একজন মানুষের চিন্তায়, আচরণে যে পরিবার এবং পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন, তার প্রভাব বারবারই দেখা যায়। আর কম বয়সীদের আচরণ আর ভাবনা গভীরভাবে প্রভাবিত করে নিজের পরিবারের এবং সমাজের পরিবেশ। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ হামলার পর যে জঙ্গিরা বিভিন্ন দেশের ২০ জন নিরীহ, নিরপরাধ নারী-পুরুষকে অকল্পনীয় নৃশংসতার সঙ্গে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে সেই জঙ্গিরা প্রত্যেকেই কম বয়সী। যে পাঁচজন জঙ্গির লাশের ছবি পুলিশ প্রকাশ করেছে তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজনই ঢাকা শহরের অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান। তিনজনই পড়ালেখা করেছে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে, এবং দুজন পরবর্তী সময়ে রাজধানীর দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে।
সচ্ছল পরিবারে বড় হয়ে রাজধানীর দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ার পরও যখন এই তরুণদের মন আলোকিত হয়নি, বরং তাদের মন গ্রাস করেছে ধর্মীয় অন্ধত্ব আর ধর্মের নামে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে নিরীহ নারী-পুরুষদের হত্যা করতে এরা দ্বিধা করেনি তখন এই সমাজে বিভিন্ন পরিবারের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম বয়সীদের প্রতি দায়িত্ব পালন নিয়ে আমাদের মনে বিস্ময় আর প্রশ্ন তৈরি হয়। প্রশ্ন তৈরি হয় কমবয়সীদের ওপর বিদ্যমান সামাজিক পরিবেশের প্রভাব নিয়েও। আমরা জানি না এই সমাজে আরো কত তরুণ এমনভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু গত এক বছরে বিভিন্ন সময় জঙ্গি হামলার পর যে কজন সন্ত্রাসী জনতার হাতে ধরা পড়েছিল তাদের প্রায় সবাই কম বয়সী। তবে এবারই প্রথম জঙ্গি হিসেবে দেখা গেল অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তানদের।
আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এই দেশে সব সময় মিলেমিশে বসবাস করেছে। এই দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু এই দেশে ইসলাম তলোয়ার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বিভিন্ন সুফি সাধক আর আউলিয়া-দরবেশের মানবিক আর দরাজ আচরণে মুগ্ধ হয়ে বহু মানুষ এই ভূখণ্ডে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। এই সুফি-আউলিয়া-দরবেশরা সাধারণ মানুষকে ভালোবেসেছেন, তাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের আচরণে উন্নাসিকতা বা ঘৃণা ছিল না। এই অঞ্চলে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা পপুলার বা ফোক ইসলাম, পলিটিকাল ইসলাম নয়। এই কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি টিকে থেকেছে। বিভিন্ন সময় হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মকে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ঠিকই, তবে সেই বিভেদ সৃষ্টি করেছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, সাধারণ মানুষ নয়। তাই সাম্প্রদায়িকতা এই দেশের মানুষ বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক হয়ে লড়াই করেই অর্জন করেছে দেশের স্বাধীনতা। এই দেশের সংগীত, সাহিত্য, কবিতায়, দর্শনে ধর্মীয় অন্ধত্বের কথা নেই। বরং বলা হয়েছে ভালোবাসার কথা, মানবিকতার কথা, মনকে উদার এবং প্রসারিত করার কথা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন ফকির, কাজী নজরুল ইসলামসহ আরো বহু কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীর বিভিন্ন রচনা সেই সাক্ষ্যই বহন করে। এই দেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানলে এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ধারণ করলে কোনো নাগরিকের তো ধর্মীয় অন্ধত্ব আর উগ্রবাদিতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিদের নৃশংসতা দেখে এবং কমবয়সীদের এমন অনুভূতিহীন জঙ্গিতে পরিণত হওয়া দেখে এই প্রশ্নই তাই আমাদের মনে তৈরি হয় আমাদের দেশের বিদ্যমান সামাজিক পরিবেশ কম বয়সীদের কোন মূল্যবোধ শেখাচ্ছে? রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়। কিন্তু দেশের নতুন প্রজন্মের মানুষদের কি আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শ আর মূল্যবোধ সম্পর্কে সফলভাবে জানাতে পারছি? তাদের কি বোঝাতে পারছি সকল ধর্মের মানুষকে সমান শ্রদ্ধা করা এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিভিন্ন পরিবারে মা-বাবারা কি খেয়াল করছেন তাদের সন্তানরা বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ছে কি না যে বই তাদের মন আলোকিত আর অনুভূতিশীল করবে? নাকি সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ বলে অনেক মা-বাবা মনে করছেন? প্রশ্ন তৈরি হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের কি যুক্তি আর অন্ধতা, আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝানোর জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন? নাকি শ্রেণিকক্ষে দায়সারা পুঁথিগত পাঠদান করেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করা হলো তারা তাই ভাবছেন?
চিন্তা করতে হয় গণমাধ্যম নিয়েও। বর্তমান গণমাধ্যম-প্রভাবিত সময়ে নাটক, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন কোন ধরনের ভাবনা আর জীবনধারা জনপ্রিয় করে তুলছে তরুণদের কাছে? গণমাধ্যমের বিভিন্ন অনুষ্ঠান কি কম বয়সীদের মধ্যে চিন্তার গভীরতা তৈরি করতে পারছে? নাকি গণমাধ্যমের নানা অনুষ্ঠান তরুণদের মধ্যে অগভীর আর স্থূলতাসর্বস্ব ভাবনাই সৃষ্টি করছে? বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোনো আদর্শ সৃষ্টি করছে কমবয়সীদের জন্য?
আমাদের দেশে আজ যখন ইসলামী জঙ্গিবাদ এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তখন এই সমাজে পরিবার এবং উপরে উল্লিখিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কীভাবে দায়িত্ব পালন করছে তা বিশ্লেষণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। কমান্ডো হামলায় নিহত জঙ্গিদের ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর জানা গেছে, সেই ছবি দেখে কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন এই জঙ্গিদের চেহারা সুন্দর আর তাই এই জঙ্গিদের প্রতি তাদের প্রেমভাব জেগে উঠেছে। কী প্রচণ্ড অনুভূতিহীন এবং সস্তা উক্তি! এই জঙ্গিরা কতটা নৃশংসতার সঙ্গে ২০ জন নিরীহ নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে তার বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি এই দয়ামায়াহীন দানবে পরিণত হওয়া তরুণরা।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেই রেস্তোরাঁয় নিহত জিম্মিদের ছবিও দেখা গেছে যে ছবিগুলোতে জঙ্গিদের বীভৎসতার নমুনা আমাদের হতবাক, স্তম্ভিত করে দেয়। তারপরও যখন কেউ কেউ সেই জঙ্গিদের প্রতি প্রেমভাব জেগে উঠেছে এমন অসম্ভব রকমের স্থূল মন্তব্য করতে পারে, তখন বুঝতে হয় এই সমাজে কিছু মানুষের চিন্তা আজ কতটা বোধহীন আর অন্তঃসারশূন্য হয়ে উঠেছে। এই ধরনের আচরণ দেখেই বোঝা যায় চটুল এবং অগভীর এক সংস্কৃতি আজ অনেক মানুষকে প্রভাবিত করছে আমাদের সমাজে। অনেক তরুণ-তরুণী এই সময় সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করায় আর বিভিন্ন ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে হালকা আড্ডা দেওয়াতেই আনন্দ খুঁজে পায়। আর বিভিন্ন নাটক ও বিজ্ঞাপন এই ধরনের জীবনধারাই তাদের কাছে হয়তো জনপ্রিয় করে তুলছে। এই কম বয়সীরা কি গভীরতাসম্পন্ন, উঁচু মানের সাহিত্য পড়ে বা চিন্তাশীল চলচ্চিত্র দেখে? পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি তাদের চিন্তাসমৃদ্ধ বই, চলচ্চিত্র, নাটক দেখার জন্য উৎসাহিত করে যে ধরনের সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র তাদের গভীরভাবে ভাবতে ও সচেতনতা অর্জন করতে সাহায্য করবে? বর্তমান সময়ে অনেক কম বয়সীর মধ্যে যে অন্তঃসারশূন্যতা চোখে পড়ে তাতে বোঝা যায় ইতিহাস, দর্শন, উঁচু মানের সাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়ার ব্যাপারে প্রচেষ্টা এবং আগ্রহের ঘাটতি আছে আমাদের সমাজে।
এই কারণেই এই সমাজে অনেক কম বয়সী তরুণ আজ গভীরভাবে চিন্তা করতে অক্ষম। চিন্তায় গভীরতা না থাকলে তারা কখনোই প্রকৃত সচেতনতা অর্জন করবে না। আর মানুষের মন অসচেতন হলেই বেড়ে যায় অন্ধ, যুক্তিহীন চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বিপদ। যে সচেতন নয় তার মনে শুভত্ব থাকে না। সে তখন যে কোনো মন্দ কাজ এবং অন্যায় করতে পারে কারণ আলো আর অন্ধকারের পার্থক্য বোঝার সক্ষমতা তার তৈরি হয়নি। যে তরুণ পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শেখে মানবিকতা এবং মুক্তচিন্তা এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যার মন করে তোলে আলোকিত আর সচেতন সেই তরুণ কি কখনো উগ্র এবং অন্ধচিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে? সেই তরুণ কি বোধহীন এক খুনিতে পরিণত হতে পারে যার কিছুটা হলেও যুক্তিনির্ভর চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে? আমাদের বুঝতে হবে যে তরুণরা এই দেশে আজ দয়ামায়াহীন খুনিতে পরিণত হচ্ছে, আর অন্য ধর্মের এবং অন্য মতের মানুষদের নির্মমভাবে খুন করা পুণ্যের কাজ বলে বিশ্বাস করছে তাদের শিক্ষাদীক্ষায় অনেক গলদ ছিল।
মানবিকতা আর যুক্তির আলোর পরিবর্তে তাদের মন আচ্ছন্ন করে রেখেছে অজ্ঞানতা আর যুক্তিহীনতার অন্ধকার। তারা পরিণত হয়েছে হিংস্র খুনিতে। আর এমন পরিণতির জন্য তাদের পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় আছে। কারণ তারা এই তরুণদের আলোকিত এবং মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ করে তোলার ব্যাপারে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দায়ী সেই সামাজিক পরিবেশ যেখানে অগভীর সংস্কৃতি গুরুত্ব পায় যে সংস্কৃতি কম বয়সীদের অনুভূতিশীল আর সচেতন করে তোলার পরিবর্তে স্থূল আর অন্তঃসারশূন্য করে তোলে।
আইনের যথাযথ প্রয়োগ সামাজিক পরিবেশের উন্নত মানের জন্য জরুরি। বাংলাদেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বারবার বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। রাজপথে এবং বাড়ির ভেতর ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে লেখক, শিক্ষক, প্রকাশকসহ অন্যান্য পেশার মানুষদের। কিন্তু কঠোরভাবে এই জঙ্গিদের দমনের চেষ্টা করে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে সরকার শান্তিপ্রিয় জনগণকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে তা আমরা বলতে পারি না। আর জঙ্গিদের দমনে যথেষ্ট সফলতা না পাওয়া গেলে জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে সাহসী হয়ে উঠবে তা তো স্বাভাবিক। আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্রমশ আমাদের দেশে জঙ্গি হামলার ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্দিষ্ট মানুষদের ওপর অকস্মাৎ ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করার পর এবার জঙ্গিরা শক্তিশালী বোমা, একে-২২ রাইফেল, পিস্তল প্রভৃতি মারণাস্ত্র এবং ওয়াকিটকি নিয়ে গুলশানের একটি রেস্তোরাঁ দখল করে নিয়েছিল। সেখানে তাদের নিক্ষেপ করা বোমা আর গুলিতে নিহত হন দুজন পুলিশ অফিসার, আহত হন আরো অনেকে। পৈশাচিকভাবে তারা সেখানে হত্যা করে ২০ জন জিম্মিকে।
গুলশানের মতো একটি সংরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট অতিক্রম করে কীভাবে এত স্বয়ংক্রিয় এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে জঙ্গিরা সেই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করল তা আমাদের মনে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। বিদেশিরা যে রেস্তোরাঁয় অনেক সময় কাটায় সেখানে একটি জঙ্গি হামলা হতে পারে এই ব্যাপারেও আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোনো আগাম ধারণা পায়নি। নিরাপত্তাব্যবস্থা আর গোয়েন্দা তথ্যের ত্রুটি থাকলে আমাদের কেবল ভয়াবহ বিপদেরই সম্মুখীন হতে হবে। নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নাগরিকদের আতঙ্কগ্রস্ত করে দেশ অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য জঙ্গিরা চেষ্টা করছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সারা বিশ্বে। এই জঙ্গিদের দমনে সরকারকে গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে সচেষ্ট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা বিপদগ্রস্ত করে তুলবে পুরো সমাজকে, আর সরকারের প্রতি শান্তিপ্রিয় মানুষের আস্থা আর নির্ভরতা কমবে।
আমাদের দেশের বর্তমান সামাজিক পরিবেশে যে অসঙ্গতিগুলো টিকে আছে তা দূর করতে না পারলে উগ্র জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ একটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। নিজেদের সন্তানদের মন আলোকিত এবং যুক্তি আর মানবিকতাবোধে সমৃদ্ধ করে তোলার ব্যাপারে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রতিটি পরিবারকে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হবে, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই। ধর্মীয় অন্ধত্ব আর জঙ্গিবাদের যে অন্ধকার পুরো পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়ছে, আমাদের সমাজে তা রুখে দেওয়ার জন্য দরকার হবে গভীর সচেতনতা। সমাজে এই সচেতনতা আর যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসারের জন্য রাষ্ট্র, দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ এবং সব শান্তিপ্রিয় মানুষকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বুঝতে অসুবিধা হয় না আলোর পরিবর্তে অন্ধকার যদি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা বিপর্যয় নিয়ে আসবে সবার জন্যই।
লেখক : অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।