মুগ্ধ হারিয়ে গিয়েও বর্তমান
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। যিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে তিনি সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সতীর্থদের সুরক্ষার জন্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মানবিকতা শুধু এখানে সীমাবদ্ধ ছিল না, তাঁর মধ্যে যে গভীর দায়িত্ববোধ ছিল, তা ছিল অসাধারণ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) প্রফেশনাল এমবিএ করছিলেন এই মেধাবী ছাত্র।
মুগ্ধর কপালের মাঝখানে গুলি লেগে ডান কানের নিচ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মুগ্ধ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আন্দোলনে শহীদ হওয়ার পর গলায় ঝুলেছিল রক্তমাখা বিইউপির আইডি কার্ড।
মুগ্ধর মৃত্যুর আগ মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই পোস্ট করেন মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের পোস্ট করা এই ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে অনেক পানির বোতল নিয়ে হাঁটছেন তিনি। আর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে বলছেন- ‘এই পানি লাগবে পানি, পানি’। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকে তাঁর কাছ থেকে পানি নিচ্ছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে বেশ সুনাম ছিল মুগ্ধর। ছিলেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে পেয়েছেন ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। মোটরসাইকেল নিয়ে ৩৪টি জেলার সার্কিট হাউসের সামনে ছবি তুলেছিলেন, চেয়েছিলেন সব জেলায় ঘুরবেন।
মুগ্ধের জীবনে স্বপ্নের কোনো সীমা ছিল না। মোটরসাইকেলে করে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ইতালিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ফাইভারে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে অর্থ সঞ্চয় করছিলেন। কিন্তু, এই স্বপ্নগুলো তাঁর অপূর্ণই থেকে গেল।
মুগ্ধ ছিলেন সেই সংগ্রামী, যিনি তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের জীবন নিয়ে ভাবেননি, বরং অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজেকে পুরোপুরি আন্দোলনের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি যখন আন্দোলনের মাঠে খাবার পানি বিতরণ করছিলেন, তখন পুলিশের গুলি মাথায় লেগে যায়। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তেও নিজের চির পরিচিত সহানুভূতি ও মানবিকতা প্রদর্শন করেন। ‘ভাই পানি লাগবে কারও, পানি’—এই বাক্যটি ছিল তাঁর শেষ নিবেদন, যা তাঁর আত্মত্যাগ এবং মানবিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
এই আত্মত্যাগ এবং মানবিকতা আমাদের মধ্যে মুগ্ধকে অমর করে রেখেছে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়