অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে সিরিজ জয়ের পথে বাংলাদেশ
২৪ ঘণ্টা আগেই টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেই উচ্ছ্বাস না কাটতেই পরাশক্তি দলটিকে আরেকবার হারাল বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলের অসাধারণ নৈপুণ্যে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। তাই পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আগামী শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি জিতলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার অসিদের দেওয়া ১২২ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। লড়াই করার আভাস দিয়ে শেষ করতে পারলেন না সাকিব আল হাসান। অভিজ্ঞদের বিদায়ে এক পর্যায়ে মনে হয়েছিল ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন হয়নি। আফিফ-সোহানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাব দিতে নেমে ১৮.৪ ওভারেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও হতাশ করেন সৌম্য সরকার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মিচেল স্টার্কের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ক্রস ব্যাটে খেলার চেষ্টা করেন সৌম্য। ঠিকঠাক পারলেন না। বল চলে যায় স্টাম্পে, বোল্ড হয়ে ফেরেন সৌম্য। দুই বল মোকাবিলা করা সৌম্য রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
স্টাম্প সোজা বল মোকাবিলা করতে গিয়ে আউট হন ওপেনার নাঈম শেখও। হেইজেলউডের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে লেগে খেলার চেষ্টা করেন নাঈম। পারলেন না। বল চলে যায় স্টাম্পে, তিনি ফেরেন ৯ রানে।
২১ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। মেহেদী হাসানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। থিতু হওয়া এই জুটি ভেঙে অস্ট্রেলিয়াকে খেলায় ফেরান অ্যান্ড্রু টাই। অসি তারকার বল এগিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু ব্যাটে লাগাতে পারলেন না। বল চলে যায় স্টাম্পে, ভাঙে তৃতীয় জুটি। ১৭ বলে ২৬ রান করেন সাকিব।
সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়া মেহেদী জীবন পেয়েও থিতু হতে পারলেন না। অসি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পার বল খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। ৬৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মেহেদী ফেরেন ২৪ বলে ২৩ রান করে।
৫ উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে মনে হয়, হাতছাড়া হয়ে যাবে ম্যাচ। কিন্তু সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন আফিফ হোসেন। নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে চাপ কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন আফিফ। ম্যাচ শেষে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ। সোহান অপরাজিত ছিলেন ২২ রানে।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করে অসিরা। এই ম্যাচেও মেহেদী হাসানকে দিয়ে বোলিং ওপেন করান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। গত ম্যাচে প্রথম বলের মতো উইকেট এনে না দিতে পারলেও প্রথম ওভারে মেহেদী দেন মাত্র এক রান। দ্বিতীয় ওভারে আসেন নাসুম আহমেদ। তাঁকে অবশ্য মেরে খেলেন অসি ব্যাটসম্যানরা। দুই বাউন্ডার মারেন অ্যালেক্স ক্যারি। নাসুমের ওই ওভারে অসিরা নেয় ১০ রান।
এরপরই তৃতীয় ওভারে বোলিং এসে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মেহেদী। ফিরিয়ে দেন ক্যারিকে। তরুণ এই স্পিনারের অফ স্টাস্পের বাইরে ফুল লেংথ বল লেগে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন কেয়ারি। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে মিড অনে ক্যাচ ওঠে যায়। সেখান থাকা নাসুম মুঠোয় জমান ক্যারির ক্যাচ। ১১ বলে ১১ রান করে ফেরেন ক্যারি।
পরে ষষ্ঠ ওভারে আরেক ওপেনার জশ ফিলিপিকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ফিলিপিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি সরে গিয়ে লেগে খেলতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। টাইমিং ঠিক হয়নি। বল ফাঁকি দিয়ে চলে যায় স্টাম্পে। এক চারে ১৪ বলে ১০ রান করেন ফিলিপি।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া বেশি রান তুলতে পারেনি। পাওয়ার প্লেতে ছয় ওভারে ৩২ রান করে অতিথিরা। এর মধ্যে ২০ বলই হয় ডট।
দুই উইকেট হারানোর পর অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেন মিচেল মার্শ ও হেনরিকস। ওই উইকেটে অনেকটা খোলস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে অসিরা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মিচেল মার্শ ও হেনরিকস। দুজন মিলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। অবশেষে ১৫তম ওভারে হেনরিকসকে ফিরিয়ে শক্ত জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ৩০ রানে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন হেনরিকস।
হেনরিকস ফেরার পর টিকলেন না মার্শ। ১৬.১ ওভারে মার্শকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে ড্যাং শরিফুল ইসলাম। ৪২ বলে ৪৫ রানে ফিরেন যান মার্শ।
এরপর শেষের দিকে চমক দেখান মুস্তাফিজ। অসি অধিনায়ক ও অ্যাশটন অ্যাগারকে তুলে নেন তিনি। মুস্তাফিজ-শরিফুলের দারুণ বোলিংয়ে ৮ রানের মাথায় চারটি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১২২ রানে থামে অস্ট্রেলিয়া।
বল হাতে আগের ম্যাচের নাসুম এবার সফল হতে পারেননি। ২৯ রান দিয়ে উইকেটহীন ছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। ২৩ রানে তিনটি নিয়েছেন তিনি। দুটি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। একটি করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১২১/৭ ( ফিলিপি ১০, ক্যারি ১১, মার্শ ৪৫, ম্যাথু ওয়েড ৪, হেনরিকেস ৪০, মিচেল স্টার্ক ১৩, অ্যাশটন টার্নার ৩, অ্যান্ড্রু টাই ৩; সাকিব ৪-০-২২-১, মেহেদী ৩-০-১২-১, নাসুম ৪-০-২৯-০, শরিফুল ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২৩-৩)।
বাংলাদেশ : ১৮.৪ ওভারে ১২৩/৫ (নাঈম ৯, সৌম্য ০, সাকিব ২৬, মেহেদী ২৩, নুরুল ২২*, আফিফ ৩৭*, মাহমুদউল্লাহ ০ ; হেইজেলউড ৩.৪-০-২১-১, স্টার্ক ৩-০-২৮-১, অ্যাগার ৪-০-১৭-১, জাম্পা ৪-০-২৪ -১, টাই ২-০-১৭-১, মার্শ ১-০-৬-০)।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।