অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
লক্ষ্য বড় নয়। জিততে মাত্র ১২৮ রান করতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু এই রানই তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। মিচেল মার্শের প্রতিরোধের পর মুস্তাফিজ-শরিফুলদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ দুই ম্যাচে হাতে রেখেই ৩-০ ব্যবধানে জিতল লাল সবুজের দল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৭ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করেন নাথান এলিস। শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজ ও মেহেদীকে আউট করে নিজের অভিষেক ম্যাচ হ্যাটট্রিকে রাঙালেন এলিস। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১১৭ রানে থামে অস্ট্রেলিয়া।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে অসিদের ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। তরুণ এই স্পিনারের বল ম্যাথু ওয়েড শরীর ঘুরিয়ে পুল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল লাফিয়ে ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে সহজ ক্যাচ যায় সেই শর্ট ফাইন লেগে। সেখান ছিলেন শরিফুল। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি তিনি। ৫ বলে ১ রান করে আউট ওয়েড। দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটেই শুরুর ধাক্কা সামলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও হাল ধরেন মিচেল মার্শ। দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাকডারমোর্টকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। ওই জুটিতেই মূলত শুক্ত অবস্থান করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
থিতু হওয়া ওই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ১৪তম ওভারে ম্যাকডারমোর্টকে বোল্ড করেন তিনি। দুই ছক্কায় ৪১ বলে ৩৫ রান করে ফেরেন এই ওপেনার।
সতীর্থ ফিরলেও উইকেটে থিতু হয়ে ছিলেন মার্শ। ৪৫ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তবে হাফসেঞ্চুরির পর বেশিদূর যেতে পারলেন না। পরের ওভারেই তাঁকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। ৪৭ বলে ৫১ রান করে আউট হন মার্শ। অভিজ্ঞ মার্শ ফিরলে শেষ দিকে ১১৭ রানে থামে অসিরা।
এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচের মতো এদিনও ব্যর্থ হন নাঈম শেখ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জশ হেইজেলউডের মিডল স্টাম্পে করা বল হালকা সুইং করে বেরিয়ে যায়। ওই ডেলিভারিটিই খেলতে যান নাঈম। তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কিপার ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসে। দুই বলে এক রান করেন তরুণ এই ওপেনার।
নাঈমের পর তৃতীয় ওভারে হতাশ করেন সৌম্য সরকার। চলতি সিরিজে চরম ব্যর্থ সৌম্য কাটা পড়েন অ্যাডাম জাম্পার বলে। লেগ স্পিনার জ্যাম্পার প্রথম বলটিই সুইপ করার চেষ্টা করেন সৌম্য। বল আঘাত করে সৌম্যের প্যাডে। এলবির আবেদন তোলে অস্ট্রেলিয়ানররা। আম্পায়ারও তাঁদের আবেদনে সাড়া দিতে দেরি করেননি।
অবশ্য সৌম্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচতে পারেন। ১১ বলে ২ রান করে ফিরে যান তিনি। ধারাবাহিক ব্যর্থ সৌম্য আগের ২ ম্যাচে করেন ২ ও ০। দুই ওপেনারকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ছয় ওভারে ২৮ রান করে স্বাগতিকেরা।
৩ রানের মাথায় দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ওয়ানডাউনে নেমে সেই চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু আশা জাগিয়ে পারলেন না টিকে থাকতে। জাম্পার বলেই কাটা পড়েন তিনি। নবম ওভারে জাম্পার বল মোকাবিলা করতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। সেখানে থাকা অ্যাশটন অ্যাগার ক্যাচ নিতে মিস করলেন না। ১৭ বলে ২৬ রান করে বিদায় নেন সাকিব।
সাকিবের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন আফিফ। কিন্তু রান আউটে কাটা পড়ে বিদায় নিতে হয় তাঁকে। ১৩ বলে ১৯ রান করে ফেরেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক।
আফিফের বিদায়ের পর দ্রুত দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। উইকেটে এসেই ৩ রান করে বিদায় নেন শামীম হোসেন। আর ৫ বলে ১১ রান করেন নুরুল হাসান সোহানও রান আউট হন।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে টিকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। টেলএন্ডারদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১৫০ রানের পুঁজি এনে দেন অধিনায়ক। ৫২ বলে হাফসেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত আউট হন। তাঁকে আউট করা এলিস শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক তুলে নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২৭/৯ (নাইম ১, সৌম্য ২, সাকিব ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৫২, আফিফ ১৯, শামীম ৩, সোহান ১১, মেহেদী ৬, মুস্তাফিজ ০, শরিফুল ০; হেইজেলউড ৪-০-১৬-২, জাম্পা ৪-০-২৪-২, অ্যাগার ৪-০-২৩-০, মার্শ ১-০-১৫-০, ক্রিস্টিয়ান ২-০-৯-০, এলিস ৪-০-৩৪-৩, টার্নার ১-০-২-০)।
অস্ট্রেলিয়া : ২০ ওভারে ১১৭/৪ (ম্যাথ ওয়েড ১, ম্যাকডামোর্ট ৩৫, মার্শ ৫১, ক্রিস্টিয়ান ৭, হেনরিকেস ২, অ্যালেক্স ২০ ; সাকিব ৪-০-২২-১, শরিফুল ৪-০-২৯-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৯-০, সৌম্য ১-০-৯-০, নাসুম ৪-১-১৯-১)।
ফল : ১০ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।