ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ
দিনের শুরুটা ছিল চরম হতাশার। ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩০ মিনিটেই প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমেও মুখ থুবড়ে পড়ে টপঅর্ডার। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন লড়াই করেন সাকিব-মুশফিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না ম্যাচ বাঁচাতে। শেষ বিকেলে ড্রয়ের আশা জাগিয়েও ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ।
আজ বুধবার দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টে বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধান ও ৮ রানে হারাল পাকিস্তান। এই জয়ের সুবাদে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল পাকিস্তান। দুই ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন সাজিদ খান।
বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথমে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিকরা। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও হারল বাংলাদেশ।
আজ ম্যাচের শেষ দিনে শুরুতে ৩০ মিনিটেই বাংলাদেশকে অলআউট করে দেয় পাকিস্তান। স্কোর বোর্ডে ১১ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩২ ওভার টিকতে পেরেছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। সাজিদ খানের দুর্দান্ত স্পিনে অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৭ রানে।
ফলোঅনে পড়ায় অনুমিতভাবেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয় হতাশায়। ২১৩ রানে পিছিয়ে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দলীয় ২৬ রানে হারিয়ে ফেলে গুরুত্বপূর্ণ ৪ ব্যাটার। আগের ম্যাচে ডাক মারা অভিষিক্ত মাহমুদুল ফিরেছেন ৬ রানে। আরেক ওপেনার থেমেছেন ২ রানে। নাজমুল হাসান শান্ত করেছেন ৭ আর অধিনায়ক মুমিনুল করেছেন ৬ রান।
দ্রুত উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন মুশফিক ও লিটন দাস। এই জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৭৩ রান তোলে বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ে ভাঙে ওই জুটি। আলগা শটে তিনি উইকেট উপহার দিলেন সাজিদ খানকে। সাজিদের বলটি ছিল একদমই শর্ট বল। টার্ন করে ঢুকছিল ভেতরে। অন সাইডে যে কোনো জায়গায় অনায়াসে খেলতে পারতেন লিটন। কিন্তু বলটি টেনে পুল করে তিনি ক্যাচ দেন তিনি। ৮১ বলে ৪৫ রান করে ফিরে যান সাজঘরে।
এরপর জুটি গড়েন সাকিব ও মুশফিক। ওই জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৪৯ রান। মুশফিক ফিরলে ভাঙে ওই জুটি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে বিদায় নেন মুশফিক। নুমান আলীর বলে ক্রিজ ছেড়ে একটু বেরিয়ে মিড উইকেটে বল ঠেলে রান নিতে যান সাকিব। মুশফিকও সাড়া দেন। কিন্তু ফিল্ডার আব্দুল্লাহ শফিক দ্রুতই বল কুড়িয়ে মুশফিককে আউট করেন। ১৩৬ বলে ৪৮ রান করেন তিনি।
এরপর বাকিদের নিয়ে লড়াই করেন সাকিব। মিরাজকে নিয়ে গড়েন ৫১ রানের জুটি। এই জুটিতে ড্রয়ের আশা প্রবলভাবে জাগায় বাংলাদেশ। কিন্তু দুজনেই ফিরলেন থিতু হয়ে। এই জুটি ভাঙতে নিজেই বল হাতে দায়িত্ব নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তাতে সফল হয়েছেন তিনি। মিরাজকে এলবির ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৭০ বল খেলে ১৪ রানে বিদায় নেন মিরাজ।
মিরাজ ফেরার কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন সাকিব। বল হাতে দাপট দেখানো সেই সাজিদ খানের বলেই আউট হন সাকিব। সাজিদের বল ডিফেন্স করার চেষ্টায় লাইন মিস করেন সাকিব। বল স্টাম্প ফাঁকি দিয়ে চলে যায় স্টাম্পে। ১৩০ বলে ৬৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফেরার পর শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশাও। বাকিরা পারেননি দলকে আর পথ দেখাতে। শেষ সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩২ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। সাজিদ খানের দুর্দান্ত স্পিনে অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৭ রানে।
৮৭ রানে অলআউট হয়ে দেশের মাঠে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড স্পর্শ করল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া ৩০ রান করেছেন নাজমুল হাসান শান্ত। বাকিরা সবাই ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। পাঁচ ব্যাটার তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। বাকিরাও পার হতে পারেননি ১০-এর ঘর।
ঢাকা টেস্টের দুদিনই ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। ফলে এ টেস্টে ড্রয়ের আশা জাগে। কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিন ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছেন পাকিস্তানি বোলাররা। ব্যাটে-বলের দাপটে বাংলাদেশকে ফলোঅনের শঙ্কায় ফেলে দেন তাঁরা। আজ মাঠে জয় তুলে নিল পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩০০/৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩২ ওভারে ৮৭ (সাদমান ৩, মাহমুদুল ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬, সাকিব ৩৩, মিরাজ ০, তাইজুল ০, খালেদ ০, ইবাদত ০* ; আফ্রিদি ৪-৩-৩-১, নুমান ১২-২-৩৩-০, সাজিদ ১৫-৪-৪২-৮, বাবর ১-০-১-০)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস (ফলোঅনের পর): ৮৪.৪ ওভারে ওভারে ২০৫ (সাদমান ২, মাহমুদুল ৬, শান্ত ৬, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৪৮, লিটন ৪৫, সাকিব ৬৩, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, খালেদ ০, ইবাদত ০*; আফ্রিদি ১৫-৫-৩১-২, হাসান ১১-৩-৩৭-২, নুমান ২০-৫-৪১-০, ফাহিম ৪-৪-০-০, সাজিদ ৩২.৪-৮-৮৬-৪, বাবর ২-১-১-১)।
ফল : ইনিংস ও ৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাজিদ খান (পাকিস্তান)।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : আবিদ আলী (পাকিস্তান)।