বাংলাদেশকে উড়িয়ে সিরিজে ফিরল দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ে হতাশায় ডুবিয়েছেন তামিম-লিটনরা। স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই করে দলকে সম্মানজনক পুঁজি এনে দেন আফিফ হোসেন। কিন্তু জয়ের জন্য এই পুঁজি যথেষ্ট ছিল না। অল্প পুঁজি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে টিকতেই পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশকে উড়িয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ রোববার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে সাত উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১-এ সমতায় ফিরল প্রোটিয়ারা। এর আগে সেঞ্চুরিয়ানে প্রথম ওয়ানডেতে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ১৯৫ রানের লক্ষ্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রান টপকাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি প্রোটিয়াদের। সুস্থ হয়ে একাদশে ফেরা কুইন্টন ডি কক একাই খেললেন ৬২ রানের অসাধারণ ইনিংস। আফিফের দারুণ ক্যাচে ফেরা ডি ককের ইনিংসে ছিল ৯ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় সাজনো। তাঁর সঙ্গে মালান উপহার দিয়েছেন ২৬ রানের ইনিংস। এই দুজনের ওপেনিং জুটিতেই মূলত জয়ের ভিত পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ফলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে মাত্র ৩৭.২ ওভার সময় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি কক ও মালান ছাড়াও ব্যাট হাতে ৫২ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তেম্বা বাভুমা। ৫৮ রান করেন কাইল।
এর আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৯৪ রানে তুলেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন আফিফ হোসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বল হাতে দারুণ খেলা রাবাদা একাই নেন ৫ উইকেট।
জোহানেসবার্গে ম্যাচটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশেষ কিছু। স্তন ক্যানসারের সচেতনতা বাড়াতে আজ গোলাপি জার্সি পরে খেলেছে প্রোটিয়ারা। এর আগে কখনো ‘পিংক ডে’ ম্যাচে হারেনি তারা। এবারও তাই হলো। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল প্রোটিয়ারা।
আজ টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে টিকতেই দিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৪ রানেই অধিনায়ক তামিমকে হারায় বাংলাদেশ। লুঙ্গি এনগিডির ডেলিভারি মোকাবিলা করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তামিম। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের উচ্ছ্বাসে ভাসালেন কেশব মহারাজ। আগের ম্যাচে দারুণ খেলা তামিম এদিন করেন মাত্র ১ রান।
ওয়ানডাউনে নামা সাকিব আজ হাল ধরতে পারলেন না। রাবাদার বল লেগে ঘুরানোর চেষ্টা করে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সহজ ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে শূন্যতে বিদায় করেন কাইল ভেরেইনা।
ওয়ান্ডারার্সের ইনিংসের শুরুতে থেকেই বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে বাড়তি বাউন্স। যার খেসারত দিলেন লিটনও। রাবাদার বল অনেকটা লাফিয়ে লিটনের গ্লাভসে লেগে উপরে উঠলে ক্যাচ নিয়ে নেন কুইন্টন ডি কক। ১৫ রানে থামে তাঁর ইনিংস।
বাড়তি বাউন্সের বল মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন ইয়াসির রাব্বিও। জীবন পেয়েও টিকতে পারেননি তিনি। ফিরেছেন ২ রানে। এরপর এলবির ফাঁদে পড়ে ১২ রানে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। রাবাদা-এনডিগিদের বোলিংয়ের সামনে মাত্র ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ। দুজনে মিলে গড়েন ৬০ রানের জুটি। কিন্তু বড় হওয়ার আগেই জুটি ভাঙেন শামসি। তিন বাউন্ডারিতে ৪৪ রানে ২৫ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ ফিরলেও উইকেটে টিকে ছিলেন আফিফ। স্রোতের বিপরীতে থাকা আফিফ তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। নির্ভার থাকা আফিফ মিরাজকে নিয়ে লম্বা সময় লড়াই করেন। তাঁর ব্যাটে চড়েই মোটামুটি সম্মানজনক স্কোর পায় বাংলাদেশ। ৭২ রানের ইনিংস খেলে থামে আফিফের ইনিংস। ১০৭ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি। মিরাজ খেলেন ৩৮ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (তামিম ১, লিটন ১৫, সাকিব ০, মুশফিক ১৫, ইয়াসির ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯, মুস্তাফিজ ২, শরিফুল ২ ; রাবাদা ১০-০-৩৯-৫, শামছি ১-০-২৬-১, কেশব ১০-০-৫৭-০, বাভুমা ৬.১-০-২২-০, এনডিগি ১০-২-৩৪-১, পার্নেল ২.৫-০-৬-১)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৭.২ ওভারে ১৯৫/৩ (মালান ২৬, ডি কক ৬২, তেম্বা ৩৭, কাইল ৫৮, রাসি ফন ডার ডাসেন ৮; তাসকিন ৪-০-৪১-০, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, শরিফুল ৪-০-২৯-০, মিরাজ ১০-০-৫৬-১, সাকিব ১০-২-৩৩-১, আফিফ ৫-০-১৫-১)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা সাত উইকেটে জয়ী।