২০১৭
ক্রিকেটে যা ছিল আলোচিত
সাফল্যের ধারাবাহিকতার বিচারে বাংলাদেশের ক্রিকেট আছে বেশ ভালো জায়গায় আছে। শেষ দু-একটি সিরিজ বাদ দিলে গত তিন বছর দারুণ কিছু সাফল্য ঘরে তুলেছে মাশরাফি-সাকিবের দল। বিশেষ করে ২০১৭ সালেও অসাধারণ কিছু অর্জন ছিল লাল-সবুজের দলের ঝুলিতে। এই সাফল্য-ব্যর্থতার বাইরে গত একটি বছর নানা কারণে আলোচনায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। তার কিছু চিত্র তুলে ধার হলো এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য :
টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির অবসর
এ বছর ৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ চলকালীন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাশরাফি। নিজের ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা দেন নড়াইল এক্সপ্রেস। অবশ্য এখনো এর কারণ জানাননি তিনি।
নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে মাশরাফি তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান দলটি একটি ভালো দল এবং দলে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড় আছে। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং আমাকে এত চমৎকার দলের নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সব সময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উত্থান এবং পতন ছিল। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যানদের খুশি করার। আমি আমার প্রত্যেক ফ্যানের কাছে তাদের প্রতি ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি। এ মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা ভালো খেলছি। আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতেও ভালো ক্রিকেট খেলবে।
‘আমি মনে করি, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার জন্য এটাই আমার উপযুক্ত সময়, যাতে অনেক তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে এবং বিসিবি তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আমি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি টিমের নতুন অধিনায়ককে আগাম অভিনন্দন জানাই এবং আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময় সামনে আসবে।
শিগগিরই আবার দেখা হবে। সকলের জন্য আমার আন্তরিক ভালোবাসা।’
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পদত্যাগ
গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষেই শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। যদিও শোনা যায়, তারও আগে বিসিবির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য আগামী ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তিনি। তার বেশ কিছুদিন আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। এখন তিনি শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ। তাঁর কোচিংয়ে আগামী জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ খলবে বাংলাদেশ।
২০১৪ সালের মে-তে বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পান হাথুরুসিংহে। তাঁর অধীনে দারুণ প্রায় আড়াই বছরে বাংলাদেশ দল দারুণ কিছু সাফল্য পায়। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। এরপর ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে সিরিজ হারিয়েছে টাইগাররা। এরপর গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছিল দল।
কী ছিল হাথুরুর পদত্যাগের কারণ, সেটা জানা না গেলেও গুঞ্জন রয়েছে—জাতীয় দলের সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে নাকি তাঁর কিছুটা দ্বন্দ্ব ছিল। অবশ্য পরে ঢাকায় এসে জানিয়ে গেছেন, বাংলাদেশ দলকে নাকি আর কিছুই দেওয়ার নেই তাঁর। সে কারণেই নাকি সরে দাঁড়িছেন এই লঙ্কান কোচ।
টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারান মুশফিক
বছরের শেষ দিকে এসে এই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারান মুশফিকুর রহিম। গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাঁকে সরিয়ে সাকিব আল হাসানের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়।
মুশফিককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, আবার সাকিবকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কেন? এ ব্যাপারে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, 'মুশফিক আমাদের দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। আমরা চাই, সে চাপমুক্ত ক্রিকেট খেলুক। ব্যাটিংয়ে আরো বেশি মনোযোগী হোক। সে কারণেই তাঁকে এই দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।'
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মুশফিক। ২০১১ সাল থেকে এই ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ৩৪টি টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর অধীনে সাতটি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। নয়টি টেস্ট ড্র হয়েছে। আর হেরেছে ১৮টি টেস্ট।
মুশফিকের নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে হারানো।
আবার টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব সাকিবের হাতে
মুশফিকুর রহিমকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে সাকিব আল হাসানকে আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়। সাকিব এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি নয়টি টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর অধীনে মাত্র একটি টেস্টে জিতেছিল বাংলাদেশ, খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর আটটি টেস্টেই হেরেছিল।
সাকিবের ঘাড়ে এখন দুই দায়িত্ব, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক তিনি। আর ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাই থাকছেন।
মাহমুদউল্লাহ টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক
ফর্মহীনতার কারণে গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্টে জায়গা পাননি তিনি। আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ থেকে বাদ পড়ে যান মাহমুদউল্লাহ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে ফেরানো হয়। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দল হতাশ করলেও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। হয়তো সেটারই প্রতিদান পেলেন এই ব্যাটসম্যান। টেস্ট দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই কিছুদিন আগে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়। আর তামিম ইকবালকে সরিয়ে সহ-অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর নাম ঘোষণা করা হয়। ফর্মহীনতার অজুহাতে কয়েক মাস আগে দলে যার জায়গাই হচ্ছিল না, কয়েক মাস পর সেই ক্রিকেটারকেই সহ-অধিনায়ক করল বিসিবি।