হৃদয় দিয়ে খেলবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেকটা ছিল আফগানিস্তানের মতো। কেউই তেমন গুরুত্ব দিয়ে নিত না। কিন্তু মাঠে হয়তো সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা ঘটিয়ে দিত অঘটন। সেই বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দলগুলোকে হারিয়ে দিলে কেউই বিস্মিত হয় না। সেটাকে অঘটন বলেও বিবেচনা করা হয় না।
আফগানিস্তানও ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের দেখানো পথে। বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় নিয়ে ক্রমেই নিজেদের গা থেকে ‘চুনোপুঁটি’ তকমাটা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে আফগানরা। আর সেই মিশনে প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান পেয়ে গেছে বাংলাদেশকেই। প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি দিয়ে শুরু হবে তিন ম্যাচের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
অল্প কয়েক দিন আগেও আফগানিস্তানে এক ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় স্টেডিয়ামে বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মানুষ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শুরু থেকেই ভয়াবহ রকমের সব বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট অঙ্গনকে।
ঝুঁকিপূর্ণ সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও আফগানিস্তান যে খুব দ্রুততম সময়ে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে নিয়েছে, তার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে ক্রিকেটারদের লড়াকু মনোভাবের। বাংলাদেশের মতো আফগানিস্তানও ক্রিকেটটা খেলে আবেগ দিয়ে। ক্রিকেটারদের দিক থেকেও যেমন, দর্শকদের দিক থেকেও ঠিক তেমনই এক আবেগ আছে খেলাটিকে ঘিরে। এবার সেই দুই দেশের প্রথম মুখোমুখি সিরিজে তার বহিঃপ্রকাশও দেখা যাবে নিশ্চিতভাবে।
বেশ কয়েকটি জায়গা ঘোরার পর আফগানিস্তান এবার তাদের হোম ভেন্যু বা ঘর বানিয়েছে ভারতের দেরাদুনে। হিমালয়ের কোল ঘেঁষা এই শহরটি প্রাকৃতিক নৈসর্গের জন্য প্রশংসিত একটা স্থান। আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর সঙ্গে অনেক মিল আছে বলে জায়গাটি বেশ পছন্দও হয়েছে আফগান দলনেতা আসগর স্টানিকজাইয়ের।
বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই দেরাদুনের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হবে। শহরটিতে এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।
টি-টোয়েন্টিতে এর আগে মাত্র একটিই ম্যাচ খেলেছিল দুই দল। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেবার সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৯ উইকেটের অনায়াস জয়। তবে গত চার বছরে অনেকটাই এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বিপিএল দিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পেরেছেন আফগান ক্রিকেটাররা। ভারতের আইপিএলে একই দলে খেলছেন সাকিব ও আফগান লেগস্পিনার রশিদ খান।
দুই দলই যে ক্রিকেটটা হৃদয় দিয়ে খেলে, তা খুব ভালোমতোই জানেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক স্টানিকজাই। তিনি বলেছেন, ‘এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে। কারণ আমরা সবাই জানি যে, দুই দলই খেলে হৃদয় দিয়ে।’ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও আফগানিস্তানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করার জন্য। মাঠে নামার আগে এমন শান্ত-সৌজন্যমূলক কথাবার্তাই শোনা যায় সবার মুখে। মাঠের লড়াই শুরু হলে কিন্তু তৈরি হয়ে যেতে পারে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। আগুনের ফুলকি ছুটে আসতে পারে আবেগের বারুদ থেকে।