বিশ্বকাপে কতটা অভিজ্ঞ মাশরাফির দল?
চারদিকে বিশ্বকাপের উন্মাদনা। আর মাত্র ২৪ দিন বাকি। এর পরই ইংল্যান্ডে পর্দা উঠবে ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরের। শেষ মুহূর্তে নিজেদের প্রস্তুতি সারছেন ক্রিকেটাররা। বসে নেই সমর্থকরাও। নানা বিশ্লেষণের মাধ্যমে খুঁজে বের করছে কার দল কতটা অভিজ্ঞ এবং শক্তিশালী।
বাংলাদেশি তারকাদের পরিসংখান দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপে কতটা অভিজ্ঞ মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। বাংলাদেশের দলে ডাক পাওয়া ১৫ জন সদস্যের মধ্যে আটজনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ছয়জনের একাধিক বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একাধিক বিশ্বকাপ খেলা ছয়জন হলেন- অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও রুবেল হোসেন। আর একবার খেলার অভিজ্ঞতা শুধু সৌম্য সরকার এবং সাব্বির রহমানের। বাকি সাতজন বিশ্বমঞ্চে একেবারেই নতুন। তাঁরা হলেন- মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু জায়েদ রাহি ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কোনো ওয়ানডে ম্যাচ না খেলেই স্বপ্নের বিশ্বকাপে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন রাহি।
তবে সব মিলিয়ে তারুণ ও অভিজ্ঞদের মেলবন্ধনে যথেষ্টই ভারসাম্যপূর্ণ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড। দলে থাকা আট ক্রিকেটারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স তুলে হলো :
মাশরাফি বিন মুর্তজা
২০০৩, ২০০৭ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্বকাপে খেলেছেন মোট ১৬ ম্যাচ। মাঝে চোটের কারণে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তাঁর। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে মোট ১৮টি উইকেট নিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। সেরা বোলিং ফিগার ৩৮ রানে চার উইকেট (ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালে, সেই ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ)। এ ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অধীনে সাত ম্যাচে তিনটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি চারটির মধ্যে একটি পরিত্যক্ত হয়। এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন, টেস্ট ম্যাচও খেলছেন না। এবার দেশের হয়ে শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন তিনি। ক্যারিয়ারের এই অন্তিম মুহূর্তে তাঁর কাছ থেকে এবার আরো ভালো কিছু আশা করতেই পারে ভক্তরা।
সাকিব আল হাসান
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২১টি ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। ব্যাট হাতে ২৫.৭১ গড়ে রান করেছেন ৫৪০। যাতে হাফসেঞ্চুরি করেছেন চারটি। আর বল হাতে ২৩ উইকেট নিয়েছেন। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ চার উইকেট নিয়েছেন তিনি। বলা যায় বিশ্বমঞ্চে মোটামুটি ভালো ছন্দেই ছিলেন সাকিব। এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন তিনি। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মাঠেও মোটামুটি ফর্মে আছেন। তাই বিশ্বকাপের পুরো টুর্নামেন্টে ফিট থাকলে তাঁর থেকে আগের চেয়ে ভালো সার্ভিস পেতে পারে বাংলাদেশ।
তামিম ইকবাল
এর আগে তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে বিশ্বমঞ্চে খুব একটা উজ্জ্বল নয় দেশসেরা এই ওপেনারের ব্যাট। তিন বিশ্বকাপে ২১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। মাত্র ২৩ গড়ে তাঁর মোট রান সংখ্যা ৪৮৩। এর মধ্যে হাফসেঞ্চুরি তিনটি। কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। অবশ্য এবার বেশ পরিণত এই ওপেনার। এবার তিনি উজ্জ্বলতা ছড়াবেন এমনটা আশা করাই যায়।
মুশফিকুর রহিম
সাকিব-তামিমদের সঙ্গে সমান তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। তিন বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলে ৫১০ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে ৩১.৮৮ গড়ে হাফসেঞ্চুরি করেন চারটি।আর কিপিংয়ে তাঁর ডিসমিসাল সংখ্যা ১৮টি।
মাহমুদউল্লাহ
বিশ্বকাপে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মাহমুদউল্লাহ। বড় মঞ্চ মানেই তাঁর সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাস। দেশের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছেন এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে মাত্র নয় ম্যাচ খেলে ৩৯৭ রান নিয়েছেন তিনি। গড় ৫৬.৭১। বিশ্বকাপে তাঁর দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে একটি হাফসেঞ্চুরি।
রুবেল হোসেন
মাহমুদউল্লাহর মতো দেশের হয়ে দুটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন পেসার রুবেল হোসেনও। ২০১১ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রথমবারের তুলনায় ২০১৫ সালে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে বেশি সফল এই পেসার। সমান ছয় ম্যাচ খেলে গত আসরে আট উইকেট নেন রুবেল। গত বিশ্বকাপে তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়েই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ৯.৩ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সৌম্য সরকার
মাত্র একটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ দলে ডাক পেয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাট থেকে একটি ফিফটি ছাড়া তেমন সাফল্য আসেনি। প্রথম বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে মোট ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন। ২৯.১৬ গড়ে মোট রান করেছেন ১৭৫। গেল দুই বছর ধরে তেমন ছন্দে ছিলেন না এই তরুণ ব্যাটসম্যান। মাঠের ব্যর্থতার প্রভাব পড়ে ক্যারিয়ারে। শুনতে হয় নানা সমালোচনা। তবে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। সদ্য শেষ হওয়া ডিপিএলের শেষ দুই ম্যাচে সৌম্যর ব্যাট দারুণ ভাবে জ্বলে ওঠে। এক সেঞ্চুরি এবং এক ডাবল সেঞ্চুরিতে সব সমালোচনার জবাব দিয়ে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছেড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
সাব্বির রহমান
সৌম্য সরকারের মতো ২০১৫ বিশ্বকাপ ছিল সাব্বির রহমানের প্রথম বিশ্বকাপ। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খুব একটা খারাপ কাটেনি তাঁর। ৬ ম্যাচে করেছেন ১৮২ রান। যার মধ্যে ৩০.৩৩ গড়ে হাফসেঞ্চুরি করেছেন একটি।