সাদা পোশাকের চ্যাম্পিয়নরা
প্রথম বিশ্বকাপের সৌরভ ছিলেন অন্যরকম। একই ম্যাচে যেখানে ইংল্যান্ডের ডেনিস অ্যামিস সেঞ্চুরি করেছেন, সেখানে আরেক ইনিংসে সুনীল গাভাস্কার যেন ওয়ানডে ক্রিকেটটা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না। এমন বৈপরীত্য নিয়েই ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। প্রথম দুবার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট উঠেছে ক্যারিবীয়দের মাথায়। আর ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের হাত ধরে উপমহাদেশে আসে প্রথম বিশ্বকাপ।
ক্রিকেটের মাঠে বরাবরই বাগরা দিত বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিই ১৯৭১ সালে ক্রিকেটকে টেস্ট থেকে ওয়ানডেতে রূপ দিয়েছে।
চার বছর পর ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকাল। ৬০ ওভারে ওয়ানডে ম্যাচ কতটা টেকসই হয়, সে লক্ষ্যে শুরু হয় বিশ্বকাপ। শুরুর দিকে দল আটটি। সহযোগী হিসেবে ছিল শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা।
ক্রিকেট বলতে পাঁচ দিনের যে টেস্ট, সে ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় তখন দুনিয়া। প্রুডেনশিয়াল কাপে সে পরীক্ষায় ইংল্যান্ড ও ভারতের ম্যাচটির দিকে তাকালেই বোঝা যায়, অনেক দলই তখন ওয়ানডের আবহাওয়া বুঝতে পারেনি।
ওই সময় ইংল্যান্ডের ড্যানিশ অ্যামিশ হলেন প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। জবাব দিতে নেমে সুনীল গাভাস্কার ৬০ ওভারে অপরাজিত থেকে করেন ৩৬ রান। তাঁর ব্যাটিং দেখে ওই সময় ক্ষিপ্ত ভারতীয় সমর্থক মাঠে ঢুকে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলেন।
এই ওয়ানডে ক্রিকেট যে শুধু ভারতই বুঝে উঠতে পারেনি তা নয়, টেস্টের মতো করে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ খেলেছে অস্ট্রেলিয়াও। উন্মুক্ত ফিল্ড প্লেসিংয়ের পরও গ্যারি গিলমোরের মতো বোলার থাকায় সমস্যাটা তেমন প্রকট মনে হয়নি তাদের। কিন্তু দিন গড়াতে থাকায় চ্যালেঞ্জ বাড়তে লাগল আরো। যে চ্যালেঞ্জের বড় নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত । ছবি : সংগৃহীত
ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বে ক্যারিবীয় দলটায় কী ছিল না? ভিভ রিচার্ডস ছিলেন, কলিন ক্রফটরা ছিলেন। এমন ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে লয়েডের বলিষ্ঠ নেতৃতে প্রথম বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায় দলটি। অন্য সেমিফাইনালে ইংলিশদের হারিয়ে ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়া।
পরে লর্ডসে অনুষ্ঠিত উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালটি জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা প্রথমবার উঠেছে তাঁদের মাথাতেই।
১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেবারও স্বাগতিক দল ইংল্যান্ড। এ আসরে কানাডাও খেলেছে শ্রীলঙ্কার মতো সহযোগী দেশ হিসেবে।
এ আসরে ফেভারিটই ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। কিন্তু গার্নার, ক্রফটের সঙ্গে মাইকেল হোল্ডিং চলে আসায় অসাধারণ এক পেস আক্রমণ নিয়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর পরের বিশ্বকাপেও ভেন্যুর পরিবর্তন হয়নি। তবে বদল হয় চ্যাম্পিয়নের জায়গা। আগের আসরগুলোতে ওয়ানডে ক্রিকেট ঠিকমতো বুঝে না ওঠা দলটিই ঘরে তোলে সেরার মুকুট। ক্রিকেট ইতিহাসে এ ঘটনাকে বলা হয় কপিলস ডেভিলসের বিস্ময়কর সাফল্য।
ফাইনালে কপিল দেব ভিভ রিচার্ডসের দারুণ ক্যাচটি ধরার পরই ম্যাচের রং বদলে যায়। তার আগ পর্যন্ত ১৯০ রানের নিচে স্কোর তাড়া করতে নামা ক্যারিবীয়রা যেন তাদের হ্যাটট্রিক শিরোপাই দেখছিল। সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি অমরনাথের অমর হয়ে থাকা স্পেলে। আর এর পরই বিশ্বকাপ আসে এশিয়ার ঘরে।
এরপর ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয় এশিয়ায়। যৌথ আয়োজক ভারত ও পাকিস্তান। স্বাগতিক দুই দলই সেমিফাইনালে ওঠে। কিন্তু উপমহাদেশের মাটিতে সবাইকে চমকে দেয় গ্যাটিংয়ের রিভার্স সুইপের ব্যাটিং। যেটিতে ভর করে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে যায় ইংল্যান্ড। অন্যদিকে বোর্ডারের নেতৃত্বে ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনালে অনেকটাই এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। বোর্ডারের বলে গ্যাটিংয়ের রিভার্স সুইপের গল্পটা ইংলিশ ক্রিকেটে এখনো দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। নাটকীয় ফাইনাল জিতে সাদা পোশাক ও লাল বলের শেষ বিশ্বকাপটা প্রথমবার জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।