চার তরুণের অভিষেকের পক্ষে মাশরাফির যুক্তি
‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজ’। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের গায়ে এমন তকমা লেগে গেছে শুরু থেকেই। প্রথম দুটি ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ঠিকঠাক কাজে লাগলেও তৃতীয় ম্যাচে এসে হোঁচট খেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মাঠ ছাড়তে হয়েছে ৩১ রানের হার নিয়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাত্রা বেশিই হয়ে গিয়েছিল কি-না, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে।
সিরিজ জয়ের হাতছানিকে উপেক্ষা করে একই ম্যাচে চারজন খেলোয়াড়ের টি-টোয়েন্টি অভিষেকের সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। চারজনের অভিষেকের পক্ষেও অনেক যুক্তি দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিযোগিতার আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের সেরা একাদশ নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে। এ কারণে সবার সামর্থ্য যাচাই করে নেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তৃতীয় ম্যাচের আগে ইনজুরির কবলে পড়ায় মাঠের বাইরে চলে গেছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মুশফিকুর রহিম।
তৃতীয় ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল আল-আমিন হোসেন ও তামিম ইকবালকে। বাদ দেওয়া হয়েছিল শুভাগত হোমকে। ফলে এত এত পরিবর্তনের মধ্যে অভিষেকের সুযোগ মিলেছে মোসাদ্দেক হোসেন, মুক্তার আলী, আবু হায়দার ও মোহাম্মদ শহীদের। তামিমের অনুপস্থিতিতে ইমরুল কায়েসকেও দেওয়া হয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে নিজের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ।
ইমরুল সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। আউট হয়ে গেছেন মাত্র ১ রান করে। তবে অভিষিক্ত চার ক্রিকেটার খুব একটা খারাপ করেননি। রান কিছুটা বেশি দিলেও দুটি উইকেট নিয়েছেন হায়দার। একটি উইকেট পেয়েছেন শহীদ। মোসাদ্দেক দুই ওভার বল করে কোনো উইকেট না পেলেও দিয়েছেন মাত্র ১০ রান।
ব্যাট হাতে আরো ভালো নৈপুণ্য দেখিয়েছেন মোসাদ্দেক ও মুক্তার। ১৮৮ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চাপের মুখে ১৯ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মোসাদ্দেক। ১৫ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুক্তার। সব মিলিয়ে অভিষিক্ত চার ক্রিকেটার খুব বেশি খারাপ করেননি বলেই মনে করছেন মাশরাফি, ‘আমরা দেখতে চেয়েছিলাম যে খেলোয়াড়রা এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেমন করে। এটা ছিল নতুনদের জন্য একটা পরীক্ষা। আমরা মোসাদ্দেককে নিয়েছিলাম, কারণ সে খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। একটা ম্যাচ পরেই তাকে চাপের মুখে ফেলাটা ঠিক না। সে ভালো বল করেছে।
ভালো ব্যাটও করতে পারে। আবু হায়দারও অনেক প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার। মুস্তাফিজের সঙ্গে হয়তো তাকে তুলনা করা যাবে না; কিন্তু প্রথম ম্যাচ হিসেবে সে ভালোই করেছে। সুযোগ দেওয়া হলে সে ধীরে ধীরে আরো ভালো করতে পারবে।’
বাইরে থেকে দেখলে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারগুলো অযৌক্তিক মনে হলেও ভেতরের পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল বলেই মনে করছেন মাশরাফি। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে এই দল নিয়েও জয় পাওয়া যেত বলে মন্তব্য মাশরাফির, ‘চারজনের অভিষেক ও আরো একটা বাড়তি পরিবর্তনের ফলে বাইরে থেকে অন্য রকম মনে হয়েছে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে আমরা নিজেদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা হেরেছি, কারণ আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারিনি।’
এখন সিরিজের চতুর্থ ম্যাচটা জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিততে পারবে কি না, তা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২২ জানুয়ারি সিরিজের শেষ ও চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে।