তাই বলে আল-নাসেরের কাছে এমন হার মেসিদের?
প্রাক-মৌসুম প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি সৌদি ক্লাব আল-নাসের ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামি। খুব সাধারণ দুটি দলের খেলা নিয়ে কারোই আগ্রহ থাকার কথা নয়। তবে, দুই দলে যখন দুই মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি খেলেন, দল ছাপিয়ে তখন আকর্ষণ জমে তাদের নিয়েই। হয়েছিলও তা! দুর্ভাগ্য, ম্যাচ শুরুর আগে রোনালদো চোটে পড়েন। জানিয়ে দেন খেলতে পারবেন না।
সিআরসেভেন নেই। মেসির সঙ্গে দ্বৈরথ হবে না। আগ্রহের আগুনে জল এতেই ঢালা হয়ে গেল। ম্যাচের দিন রিয়াদের কিংডম অ্যারেনায় বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে শুরুর একাদশে ছিলেন না মেসিও। ভক্তদের শেষ আশার প্রদীপটুকুও নিভু নিভু। তবে, মেসি-রোনালদোকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে ঘরের মাঠে সৌদির দর্শকরা দেখল দুরন্ত এক ম্যাচ। মায়ামির জালে হাফডজন গোল দিয়েছে আল-নাসের। অতিথিদের উড়িয়ে দিয়েছে ৬-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
ম্যাচের সবে তিন মিনিট। রোনালদোর পর্তুগিজ সতীর্থ ওতাভিওর গোলে এগিয়ে যায় আল-নাসের। মরু ঝড়ের সেই শুরু। ১০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার তালিসকা। তবে, ম্যাচের সবচেয়ে সেরা গোল ও মায়ামির হতভম্ব হওয়ার মুহূর্তটা আসে ১২তম মিনিটে।
নিজেদের অর্ধে ফ্রি-কিক পায় আল-নাসের। এমন জায়গা থেকে ছোট পাস কিংবা বড়জোড় একটা লব করে থাকেন ফুটবলাররা। এতদূর থেকে অহেতুক প্রতিপক্ষের গোলমুখে তো আর শট নেওয়া যায় না। বোধহয় যায়! প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক যদি বোকার মতো গোলপোস্ট ছেড়ে বহুদূর এসে দাঁড়ায়, ডিফেন্ডাররা যদি ছন্নছাড়ার মতো অপ্রস্তুত থাকে। সেই সুযোগটাই নিলেন এমেরিক লাপোর্তে। গোলমুখ বরাবর লম্বা এক শট নিলেন লাপোর্তে। মায়ামির গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডার দৌড়ে গিয়ে লাফিয়েও নাগাল পেলেন না বলের। কোণাকুণি জালে গিয়েই থামল দীর্ঘ শটটা।
১২ মিনিটেই তিন গোলে এগিয়ে যায় আল-নাসের। লাপোর্তের সেই গোলের পর তো মায়ামি আরও হতশ্রী হয়ে পড়ে। এরপর অবশ্য প্রথমার্ধ্বে আর কোনো গোল হয়নি। ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আল-নাসের। বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচের ৫১ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পক্ষে চতুর্থ গোল করেন তালিসকা। ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে পড়ে মায়ামি।
৬৮ মিনিটে দৃশ্যপটে আসেন সৌদি ফরোয়ার্ড মোহামেদ মারান। স্কোরলাইন পরিণত করেন ৫-০ তে। ৭৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে নিজের হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন তালিসকা। নাসের পায় ছয় গোলের বড় লিড।
সব হারানোর পর যখন আর কিছুই ছিল না, তখন মাঠে নামেন মেসি। ৮৩ মিনিটে মাঠে নেমে শেষ কয়েক মিনিট দর্শকদের একটু চোখের শান্তিই দিলেন ক্ষুদে জাদুকর। পর্তুগিজ সুপারস্টার রোনলদোকে ছাড়াও আল-নাসের যথেষ্ট সমৃদ্ধ দল। রোনালদো অবশ্য গ্যালারিতে ছিলেন দলকে প্রেরণা দিতে। কিন্তু মেসিকে ছাড়া মায়ামি একেবারে যাচ্ছেতাই, সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। অথচ মায়ামির একাদশে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ, সার্জিও বুস্কেটস ও জর্দি আলবার মতো তারকারা।
সবাই তো আর মেসি-রোনালদো নন। বুড়িয়ে গেলেও যারা ফুরিয়ে যান না। ধারে-ভারে, আবেদনে আর মাঠের খেলায়—তাদের তুলনা তারাই।