মহাকাল মনে রেখো মেসিকে
লিওনেল মেসি বোধহয় ঘূর্ণি, যার ঘূর্ণিতে ঢেউ খেলে সাগরে। আবার তিনিই শীতল হাওয়া। শান্ত সাগরপাড়ে বসে থাকা নাবিককে আহ্বান জানান—এসো, পাড়ি দেই উত্তাল পথ। যে পথে বাধা ছিল, তা মাড়িয়ে এসেছি। তোমাদের এই পথে কেবলই এগিয়ে চলার গান। আমি আছি পাল তুলে, হাল ধরে।
ক্লাব পর্যায়ে লিওনেল মেসি যা করেছেন, কিংবদন্তির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বহু বছর আগেই। ২০১৪ সালে তা পূর্ণতা পেত, জার্মান ফুটবলার মারিও গোৎজের গোলে তা হয়নি। ফুটবল দেবতা বোধহয় অন্যভাবে লিখতে চেয়েছিলেন গল্পটা। তাই, ২০১৬ তেও কাঁদান মেসিকে।
হেলাল হাফিজ তার কবিতায় বেদনাকে কাঁদতে মানা করেছিলেন। তিনি বেদনাকে বলেছিলেন, কেঁদো না। ফুটবল যদি কবি হয়, মেসি তো তার কাব্য। কে জানে, মেসির কান্নার নোনাজল আকাশপানে বাষ্প হয়ে ওড়ার সময়ে কেউ বলেছিল কি না, মেঘ ঝরে একদিন ঠিক বৃষ্টি হবে। সাফল্যের সেই বর্ষণে তুমি ভেসে যাবে।
চার বছর আগেও মেসির অর্জনের খাতা ছিল শূন্য। ক্লাবের সর্বজয়ী মেসি জাতীয় দলের জার্সিতে পাননি কিছুই। চার বছর পর পাল্টে গেল দৃশ্যপট। মেসির ট্রফি কেবিনেটে এখন চারটি আন্তর্জাতিক শিরোপা। যার শেষটি জিতলেন আজ সোমবার (১৫ জুলাই)।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোপার ফাইনালে ৭০ মিনিটের আগেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। বেঞ্চে বসে তার কান্না ছুঁয়ে যায় কঠোর হৃদয়কেও। আট বছর আগে এমনই এক কোপার ফাইনালে মেসির সেই কান্নায় ছিল না পাওয়ার হাহাকার, আজকের কান্নায় সব পেয়েও আরও পাওয়ার পথে সতীর্থের সঙ্গী হতে না পারার দুঃখ। সতীর্থরা তাকে হতাশ করেননি।
মেসির হাতে এখন চারটি আন্তর্জাতিক ট্রফি। যার সবকটিতে আর্জেন্টিনার নেতৃত্বের ভার ছিল তার কাঁধে। এই মেসিই বলিভিয়ার লা পাজের উচ্চতায় বমি করেছিলেন মাঠেই। সময় বদলেছে, একে একে তার সব লেনাদেনা ঘুচে গেছে। কিন্তু, তিনি মোছেননি। কখনও মুছবেনও না, যতদিন অন্তত ফুটবল আছে। তাকে মনে রাখতেই হবে।
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর, আর্জেন্টিনার শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর, কোপা-বিশ্বকাপ-কোপা, ঐতিহাসিক ট্রেবল জেতার পর মেসি তখন শিশুর মতো উল্লাসে মাতোয়ারা। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খরচ করেছেন মোটে দুটি শব্দ। কে জানে, আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছেন কি না, মহাকাল মনে রেখো!