নীল জলে ১৭ বছরের কিশোরীর বিশ্বজয়
নাম তার সামার ম্যাকিনটোশ। ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরীর জন্ম কানাডার টরন্টো শহরের অন্টারিওতে। জন্মের পর সাঁতারে অনুপ্রেরণা হিসেবে আইডল হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাকে। ম্যাকিনটোশের মা জিল হোর্সটেডও ছিলেন কানাডার বিখ্যাত সাঁতারু। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ অলিম্পিকে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন। এবার মায়ের পথ ধরে অলিম্পিকের মঞ্চে বিশ্বজয় করলেন কিশোরী ম্যাকিনটোশ। প্যারিসের নীল জলে সাঁতারে চমক দেখিয়ে সোনার পদক নিজের করে নিয়েছেন এই কানাডিয়ান কিশোরী।
গত সোমবার প্যারিস অলিম্পিকে ৪০০ মিটার মিডলে মাত্র ৪ মিনিট ২৭.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনা জিতেছেন ম্যাকিনটোশ। এই ইভেন্টে ম্যাকিনটোশের চতুর্থ দ্রুততম টাইমিং এটি। যদিও এই ইভেন্টের বিশ্ব রেকর্ডও তার। সেটি হলো ৪ মিনিট ২৪.৩৮ সেকেন্ড।
অবশ্য টোকিও অলিম্পিক থেকেই ম্যাকিনটোশের চমক দেখে ফেলে পুরো বিশ্ব। মাত্র ১৪ বছর বয়সে কানাডার সাঁতারু দলের সঙ্গে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন এই কিশোরী। সেবার অল্পের জন্য পদক গলায় না দিতে পারলেও তিনি যে সাঁতারে কানাডিয়ানদের স্বপ্নজয়ের সারথী হতে যাচ্ছেন সেটা বোঝাই যাচ্ছিল।
টোকিও অলিম্পিকের পর মাঝের এই সময়টায় নিজেকে আরও প্রস্তুত করেছেন ম্যাকিনটোশ। শানিয়েছেন নিজের সাঁতারু প্রতিভা। যার প্রমাণ তো মিলে গেল প্যারিসের নীল জলে।
প্যারিস অলিম্পিকে ম্যাকিনটোশের প্রথম চমকটা ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। যেখানে কিংবদন্তি কেটি লেডিকিকে পেছনে ফেলে রূপা জিতে নেন ম্যাকিনটোশ। এখানেই থেমে থাকেননি। স্বপ্নযাত্রায় সোনা ছোঁয়া যে তখনও বাকি। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল ৪০০ মিটার মিডলে। যেখানে সবাইকে ছাপিয়ে সোনার পদক গলায় পরেন ম্যাকিনটোশ।
সোনা জয়ের হাসি ফোটার পর পোডিয়ামে ওঠে কিছুটা আবেগী হয়ে যান এই বিস্ময় বালিকা। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ঠোট মেরানোর সময় মনে পড়ে যায় তার ছোটবেলার স্মৃতি। সেই স্মৃতিচারণ করে সোনাজয়ী কিশোরী বলেন, ‘এখনও নিজেকে আমার সেই ১০ বছর বয়সী মেয়েটি মনে হচ্ছে। ছেলেবেলায় যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, সেই পথ ধরেই ছুটে চলার চেষ্টা করছি। আমি এবং যতদিন সম্ভব চাই এই খেলায় থাকতে। আমার মনে পড়ে, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাইতাম। এখন অলিম্পিকে এসে এখানে গলা মেলাতে পারাটা দারুণ।’
অলিম্পিকের মতো মর্যাদাপূর্ণ আসরে সোনার মেডেল পরার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ম্যাকিনটোশ বলেছেন, ‘অনুভূতি? আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা (স্বর্ণজয়) অবাস্তব। সোনার পদক জিতে এই পোডিয়ামে দাঁড়ানো আমার স্বপ্ন ছিল। সেটি পূরণ করতে পেরে খুবই খুশি।’
এর পরই নিজেকে তৈরি করার গল্প শোনালেন এই তরুণী, ‘যতবারই বিশ্বমঞ্চে খেলি, কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে, সেটা সম্পর্কে আরও বেশি করে শিখি। সেটা মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ও আবেগের জায়গা থেকে। খুব বেশি উত্তেজিত হই না, ভেঙেও পড়ি না। নিজের ফলের ওপর নির্ভর করি।’