তবে কি বৃথা যাচ্ছে সাকিবের অনুরোধ?
সাকিব আল হাসান কখনও দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলেন, নিজ দেশে পরবাসী হবেন? যাকে মাথায় করে রাখত গোটা জাতি, যার সাত খুন একপ্রকার মাফই হয়ে যেত, সেই তিনিই বাংলাদেশের মাটিতে একটি টেস্ট খেলতে অনুরোধ জানিয়েছেন! ৫ আগস্টের পর বদলে যাওয়া রাজনৈতিক অবস্থা সাকিবকে ঠেলে দিয়েছে দোষীর কাতারে। যে দোষের দায় নিয়েও যেন পার পাচ্ছেন না তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সাকিবের নীরব থাকাটাই কাল হলো তার জন্য। যদিও, কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে সেই সময় নিজের অবস্থান জানিয়েছিলেন সাকিব। তাতে, মন ভরেনি ছাত্র-জনতার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জ্বালানো হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের কুশপুত্তলিকা। এছাড়া, মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের বাইরে দেয়ালে স্লোগান লিখে সাকিবের বিরোধিতা করা হয়।
এতেই আটকে গেল দেশের মাটি থেকে সাকিবের অবসরের সম্ভাবনা। যদিও, এই তারকাকে নিয়েই আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বিসিবি। ক্রীড়া উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বিসিবি প্রধান, সবাই নজর দিয়েছেন সাকিবের নিরাপত্তায়। সাকিবও শঙ্কা কাটিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাংলাদেশে আসার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতোমধ্যে দুবাই পৌঁছান তিনি।
কিন্তু, গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাতে হঠাৎ করে বদলে যায় দৃশ্যপট। জানা যায়, দেশে ফেরা হচ্ছে না সাকিবের। নিরাপত্তাজনিত কারণেই তাকে আপাতত দেশে ফিরতে মানা করা হয়েছে। অথচ, নিজের সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টে সাকিব দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, মিরপুরে যাতে খেলতে পারেন। তিনি সেই পোস্টের একাংশে জানান সবাইকে নিয়ে শেষটা রাঙানোর ইচ্ছের কথা।
সাকিব লেখেন, ‘এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে। আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি –এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক আমি নই, আপনারা!’
তবে, সাকিবের সেই হিরোরা অলক্ষ্যে প্রত্যাখান করেছেন নিজেদের একসময়ের মহানায়ককে। যিনি নীরব ছিলেন, যখন তার সবচেয়ে বেশি সরব হওয়ার আশায় ছিল ছাত্র-জনতা।