হাওড়া ব্রিজ থেকে কুতুব মিনার
ঈদে বেড়াতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে বেড়াতে যাওয়ার কথা এলেই সামনে চলে আসে সুন্দর একটি বা একাধিক স্থানের কথা। আমাদের এই শ্যামল বাংলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান, যা ঘুরে দেখা যেতে পারে স্বল্প সময়ে ঈদের ছুটিতেই। কিন্তু যাঁরা একটু বাড়তি সময় নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান, তাঁদের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতকেই প্রথমে এগিয়ে রাখা যায়। ভারত-বাংলাদেশ ভূখণ্ডের পাশে হওয়ায় আপনি সহজেই ভ্রমণ করতে পারেন আকাশ কিংবা সড়কপথে। আর এ ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করতে দেশেই রয়েছে অনেক মাধ্যম।
দেশের বাইরে ভ্রমণে প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে সে দেশের ভিসা। এ বিষয়ে আপনাকে সহযোগিতা করতে ঢাকার গুলশান, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও খুলনায় রয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ভিসা নিশ্চিত হলেই আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন সেই সব দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের, যা মোগল আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন পর্যন্ত বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য হিমাচল প্রদেশের শিমলা-মানালি হাত বাড়িয়ে বসে আছে আপনাকে বরণ করে নিতে। আপনাকে প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে, কোন স্থান থেকে সফর শুরু করতে চান। যদি ভারতের রাজধানী ‘নয়াদিল্লি’ থেকে ভ্রমণ শুরু করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই বিমানযোগে যাত্রা করতে হবে, ঢাকা থেকে সরাসরি ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। আর হাতে দুদিন সময় বাড়িয়ে নিলেই বাস ও ট্রেনের আনন্দময় ভ্রমণের পাশাপাশি দেখা হয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহর ও এর আশপাশের অনেক কিছু।
কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে কলকাতা
ঢাকার কল্যাণপুর থেকে আপনি সহজেই কিনে নিতে পারেন কলকাতার বাস টিকেট। শ্যামলী, সোহাগসহ বেশকিছু পরিবহন প্রতিদিন সকালে ও রাতে ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস চালু রেখেছে। টিকেটের মূল্য এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। মাত্র ১২ ঘণ্টার ভ্রমণে আপনি পৌঁছে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা শহরে। কলকাতা যাওয়ার পথেই দেখা হয়ে যাবে বাংলাদেশের সীমানা-ঘেঁষা ভারতের বনগাঁও। তার পর চোখের সামনে চলে আসা গাইঘাটা ও হাবড়া দেখতে দেখতে মনের অজান্তে চলে আসবে কর্মব্যস্ত নগরী কলকাতা, যেখানে প্রতিমুহূর্ত মানুষ আর গাড়ি পাল্লা দিয়ে ছুটছে একে অপরের সঙ্গে।
কলকাতায় যেসব জায়গায় বেড়াবেন
কলকাতা শহরের সব গলিতেই যেকোনো মুহূর্তে আপনি পেয়ে যাবেন ট্যাক্সি। কলকাতা পৌঁছে হোটেলে বিশ্রাম সেরে নিয়ে ট্যাক্সি চেপে চট করেই দেখে নিতে পারেন সেই বিখ্যাত হাওড়া ব্রিজ। আকাশছোঁয়া উঁচু এই ব্রিজের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণ আপনার মন ভোলাবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পাশেই হাওড়া রেলস্টেশন। একই সঙ্গে পেয়ে যাবেন হাওড়া নদীর ওপর নবনির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ। এক চক্করে দেখে নিতে পারেন কলকাতা শহরে অবস্থিত ব্রিটিশদের নির্মিত সব ভবন, যা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে। রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সাইনস সিটিসহ আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সব ঘুরে দেখতে আপনার সময় লাগবে অন্তত দুদিন।
কলকাতা থেকে দিল্লি যাবেন যেভাবে
কলকাতা দর্শন শেষ করে ট্রেনের দুলুনিতে দুলতে দুলতে চলে যান নয়াদিল্লি। হাওড়া অথবা শিয়ালদহ রেলস্টেশন থেকে টিকেট কেটে আপনি ট্রেনের আরামদায়ক ভ্রমণের সঙ্গে চারপাশ দেখতে দেখতে চলে যেতে পারেন নয়াদিল্লি। তবে তাৎক্ষণিক টিকেট না পাওয়ার ঝামেলা এড়াতে চাইলে বাংলাদেশে থাকাকালেই কিনে নিতে পারেন ই-টিকেট। টিকেটের মূল্য তিন হাজার টাকা। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে মাত্র ১৭ ঘণ্টার ভ্রমণ।
নয়াদিল্লিতে যে পাঁচ স্থান অবশ্যই দেখে আসবেন
নয়াদিল্লি ভারতের রাজধানী হওয়ায় এখানেই কেন্দ্রীয় সরকারের সব অফিস-আদালতসহ রয়েছে বহু সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সময় করে ঘুরে নিতে পারেন সেগুলো। কিন্তু হাতে সময় কম থাকলে যেগুলো অবশ্যই প্রথমে দেখে নিতে পারেন, তার মধ্যে রয়েছে কুতুব মিনার, দিল্লির লালকেল্লা খ্যাত রেডফোর্ড, ইন্ডিয়া গেট, লোটাস টেম্পল ও জামা মসজিদ। শহরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত ইন্ডিয়া গেট। স্বাধীনতা দিবসে এই ইন্ডিয়া গেট থেকেই শুরু হয় ভারতে স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠান। খুব অল্প সময়ের দূরত্বেই রয়েছে রেডফোর্ড। হাতে ঘণ্টা দুই সময় নিয়েই প্রথমে দেখে নিন এ দুটি। তার পর দেখে আসুন কুতুব মিনার ও লোটাস টেম্পল। দিল্লি থেকে কুতুব মিনার যেতে সময় লাগবে আধঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিটের মতো। তার পরই নয়নভরে উপভোগ করুন কুতুব মিনারের সৌন্দর্য। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ইট নির্মিত মিনার। ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক কুতুবউদ্দিন আইবেকের নির্দেশে এটি নির্মাণ করা হয়। এর দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী এককথায় আপনাকে অবাক করবেই। এটিকে ভারতের সর্বোচ্চ প্রস্তর নির্মিত মিনারও বলা হয়ে থাকে। এটিকেই ধরা হয় দিল্লির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে সমগ্র কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখতে। এখানে আরো রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। কুতুব মিনার দেখা শেষ করে সোজা চলে যেতে পারেন লোটাস টেম্পল। পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ঘুরে দেখুন টেম্পলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। আপনাকে আতিথেয়তায় বরণ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবীরা অপেক্ষায় রয়েছেন সেখানে। তাঁরাই আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন টেম্পলের ভেতরটা এবং বর্ণনা করে শোনাবেন এর পবিত্রতার কথা।
জেনে নিন টিকেটের মূল্য ও খোলা থাকার সময়
অবশ্যই মনে রাখবেন, দিল্লির এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো ভ্রমণ করতে হলে আপনার জানা থাকতে হবে কখন খোলা থাকে। সেগুলো খোলা থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ইন্ডিয়া গেট ঘুরে দেখতে পারেন দিনে অথবা রাতে। এটি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। নেই কোনো প্রবেশমূল্য। রেডফোর্ড খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত, সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। দেশি দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ১০ রুপি, কিন্তু বিদেশিদের জন্য টিকেটের মূল্য ২৫০ রুপি। কুতুব মিনার দেখে শেষ করতে হবে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। প্রবেশমূল্য ২৫০ রুপি। আর লোটাস টেম্পলে অবশ্যই প্রবেশ করতে হবে সকাল থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। প্রবেশে লাগবে না কোনো টিকেট। জামা মাসজিদ খোলা থাকবে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, নামাজের সময় বাদে। প্রবেশে লাগবে না কোনো টিকেট। তবে ক্যামেরা বহন করলে আপনাকে তার টিকেট নিতে হবে ৩০০ রুপি দিয়ে। দিল্লি ভ্রমণ শেষ করে শুরু করতে পারেন শীতের দেশ হিমাচল যাত্রা। সে গল্প থাকছে আগামী পর্বে।
সতর্কতা
• দেশের বাইরে আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাসপোর্ট ও ভিসা। তাই পাসপোর্ট সাবধানে রাখুন। বর্ডার পার হওয়ার সময় কোনো দালাল কিংবা অপরিচিত কারো সহায়তার প্রয়োজন নেই।
• আপনি যে পরিমাণ অর্থ সঙ্গে বহন করবেন, তা পাসপোর্টে এনডোর্স করে নিন এবং তা ডলার করে নিন।
• প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদ অবশ্যই নিতে ভুলবেন না।
• মনে রাখবেন, ভ্রমণে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চলবে না। তাই ঘোরাফেরার মাঝে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিন, পরিষ্কার পানি পান করুন এবং হজমে সহায়ক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
• দর্শনীয় স্থানগুলোর আশপাশে অনেক সময় অতিরিক্ত মূলে স্ট্রিট ফুড কিনে খেতে হয়, যা মানেও তেমন ভালো নয়। তাই এগুলে কেনার আগে তার মূল্য ও মান যাচাই করে নিন।
• মোবাইল, ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখলে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করুন এবং অবশ্যই চার্জার নিতে ভুলে গেলে চলবে না।
• আপনার ভাড়া করা গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন, তাঁকে বন্ধু বানাতে পারলে আপনার ভ্রমণ হয়ে উঠবে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আনন্দদায়ক।