আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, বিজেপিতে যোগ দিয়ে মিঠুন
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে জানিয়েছেন সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী রাজ্যটির জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
রোববার কলকাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিঠুন বলেন, ‘তৃণমূল আমাকে এমপি বানিয়েছে। আমি (তৃণমূল) ছেড়ে এসেছি, কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না। কাউকে দোষও দিচ্ছি না। আমি বলব, আমারই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।’
২০১৪ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তৃণমূলের টিকেটে রাজ্যসভার সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। এরপর হঠাৎ করেই রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন ফাটাকেষ্ট খ্যাত এই অভিনেতা।
সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়ানোয় অনেকটা ব্যথিত হয়েছিলেন এই সুপারস্টার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে চিঠি লিখে টাকা ফেরত দেন তিনি। এরপর থেকে রাজনীতিতে তেমন দেখা যায়নি।
এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদান করে ফের আলোচনায় এসেছেন মিঠুন।
এদিন ব্রিগেড সমাবেশের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ১৫ মিনিট বৈঠক হয় তাঁর। এরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এ অভিনেতা।
মিঠুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজ অনেক কিছু নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন তিনি বাংলাকে ভালোবাসেন। আমাকে তিনি বলেছেন, আমি জানি আপনি বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।’
বাংলার প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি রূপরেখা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন বলেও জানান মিঠুন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিজেপির সরকার হবে সবার সরকার। বাংলার পুরোনো গৌরব ফেরাতে আমরা সব কিছু করতে রাজি।’
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলার যা কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সবকিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাকে সোনার বাংলা গড়তে হবে।
একুশের ভোটের প্রচারে এসে আজ রোববার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে এভাবেই পশ্চিমবঙ্গবাসীকে প্রতিশ্রুতি দেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে বাংলায় যে বিকাশ ঘটবে তা ২৫ বছরের ভিত তৈরি করে দেবে। ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ভারতের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করবে বাংলা। কলকাতাকে সিটি অব জয় থেকে সিটি অব ফিউচার করা হবে।’
মোদি বলেন, ‘ব্রিটিশরা বাংলায় দমনপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু আর কেউ বাংলার অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বাংলার মানুষকে কথা দিচ্ছি, বাংলা থেকে যা কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত দেব।’
এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো (প্রধান) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘বাংলার মানুষ দিদির ওপর ভরসা করেছিলেন কিন্তু দিদি ও তাঁর লোকেরা সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছেন। বাংলার মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন দিদি। মা-বোনদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। বাংলার মানুষ তবু ভেঙে পড়েনি। বরং বাংলায় পরিবর্তন ও বাংলার উন্নয়ন চাইছে তারা। বাংলা জুড়ে আজ পরিবর্তনের ঝড় উঠেছে। বাংলার ছেলে মিঠুন চক্রবর্তী আজ বাংলায় পরিবর্তনের জন্য আমাদের সঙ্গে এসেছেন।’
এদিন পশ্চিমবঙ্গের বাম-কংগ্রেস জোটকে কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতার লড়াইকে ভিত্তি করে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। তারপর কিছুদিন কাজ করার পরেই শুরু হয়ে যায় রাজনীতির খেলা। আর কংগ্রেসীদের ঠেকাতে বামপন্থিরা এক সময় বলতেন, কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও। আজ সেই কালো হাত কী হলো? আজ সেই কালো হাত সাদা হয়ে গেল। যে হাত বামপন্থিরা গুঁড়িয়ে দিতে চাইতেন, আজ সেই কালো হাত ধরেই এগিয়ে যেতে চাইছেন বামেরা। আর এই বামেদের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের স্লোগান তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মা, মাটি মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রিতি তিনি রেখেছেন কি?’
বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘তৃণমূলের আয়ু কমে আসছে। আজ সারা দেশ শুনে রাখুক, বাংলায় দুর্নীতি আর নয়, তোলাবাজি আর নয়, কাটমানি আর নয়, সিন্ডিকেট আর নয়, বেকারত্ব আর নয়, হিংসা আর নয়, আতঙ্ক আর নয়, তুষ্টিকরণ আর নয়, অন্যায় আর নয়। বিজেপি বাংলায় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’
মমতাকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘বাংলার মানুষ দিদি হিসাবে আপনাকে বেছে নিয়েছিল। কিন্তু আপনি নিজেকে শুধু ভাইপোর পিসি হিসেবে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলেন।’
মোদি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে স্কুটি চালাচ্ছিলেন দিদি। সবাই ভয় পাচ্ছিলাম, আপনি পড়ে গিয়ে আঘাত না পান। ভাগ্যিস পড়ে যাননি। নইলে যে রাজ্যে স্কুটি তৈরি হয়েছে, সেই রাজ্যকেই শত্রু বানিয়ে ফেলতেন।’
মোদি এদিন মমতাকে কটাক্ষ করে আরও বলেন, ‘আমাকে কখনও রাবণ, কখনও দৈত্য, কখনও গুন্ডা বলছেন দিদি। এতো রাগ কেন দিদি? আপনার দল ও আপনার সরকারের পাঁকেই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। গণতন্ত্রের নামে বাংলায় লুটতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। জাতি ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করেছেন, তাই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। আমি দিদিকে অনেকদিন ধরে চিনি। বামপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়া দিদি এমন ছিলেন না। কিন্তু আজ দিদির রিমোর্ট কন্ট্রোল অন্যের হাতে।’
তৃণমূলের তরফ থেকে যে বারবার বিজেপিকে বহিরাগত বলা হয় তার উত্তরে মোদি বলেন, ‘মার্কস, লেনিনের মতবাদ বামেদের আদর্শ, তৃণমূলের আদর্শ কংগ্রেস, বিজেপি শ্যামাপ্রসাদের আদর্শে দীক্ষিত। বিজেপির ডিএনএতে বাংলার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে কারা বহিরাগত আপনারাই ভাবুন।’