মহানবী (সা.)-কে অবমাননার প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা-নেত্রীদের কটূক্তির জেরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গতকাল শুক্রবারও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে পরপর দ্বিতীয় জুমায় মুসল্লিরা বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এ ছাড়া প্রয়াগরাজ, লখনৌ, মুরাদাবাদ ও সাহারানপুরে হট্টগোল হয় ও বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরেও শুক্রবার বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার আটলায় জুমার নামাজের পর স্লোগান ও হট্টগোল হয়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে পাথর নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে উত্তেজিত জনতাকে ধাওয়া করে। এরপরও মারমুখী জনতা শান্ত না হলে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশকে ফাঁকা গুলিও চালাতে হয়। পাথর নিক্ষেপের ফলে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ কয়েক জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, বিক্ষোভকারীরা একটি ট্রলিতে আগুন ধরিয়ে দিলে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালায়। একটানা দেড় ঘণ্টা ধরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পুলিশের কর্মকর্তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও গোলযোগ অব্যাহত থাকে। জনতা এ সময়ে বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মার ফাঁসি দাবি করে।
একই ইস্যুতে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে মুসল্লিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। জুমার নামাজের পর সাহারানপুরের সড়কে নেমে আসা মুসুল্লিরা ১৫/২০ মিনিট মসজিদের বাইরে স্লোগান দেন। হাতে তেরঙ্গা নিয়ে আসা যুবকেরাও বিক্ষোভে শামিল হন। পুলিশ কর্মকর্তারা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সবাই বাড়ি ফিরে যান।
এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার সমস্ত মার্কেট বন্ধ ছিল। রশিদিয়া মসজিদে জুমা নামাজের পর কিছু লোক সড়কে নেমে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর পুলিশের কথা না শোনায় পুলিশ লাঠিপেটা করলে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পরিবেশ অশান্ত করার অভিযোগে ছয়/সাত জনকে আটক করে পুলিশ।
শুক্রবার মুরাদাবাদে জুমার নামাজের পর আচমকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। নামাজ শেষে একদল যুবক মিছিল করে নূপুর শর্মার গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। নামাজের পর বিক্ষোভকারীরা দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন। এ সময়ে লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পশ্চিমবঙ্গে শুক্রবার সকাল থেকে অবরোধ হয় হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া, ধুলাগড়সহ বিভিন্ন জায়গায়। এর পাশাপাশি শুরু হয় রেল অবরোধ। বম্বে রোডের কুলগাছিয়া, পীরতলায় অবরোধের জেরে আটকা পড়ে বহু গাড়ি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশও এ সময়ে পালটা লাঠিপেটা করে। হাওড়ার নিমদিঘি এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুর ২টা থেকে দফায় দফায় অবরোধে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী অসংখ্য যানবাহন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, রেলপথেও অবরোধ করা হয়। হাওড়ার বাগনান, ফুলেশ্বর, চেঙ্গাইল-সহ একাধিক স্টেশনে দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়ায় জরুরি কাজে আটকে পড়েন অনেকেই।