হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি ‘অর্ধেকে নামাতে পারে’ কোভিডবিরোধী ট্যাবলেট
করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থদের জন্য তৈরি একটি ট্যাবলেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ব্যাপক সাফল্যের আভাস মিলেছে। ‘মোলনুপিরাভির’ নামের ওই ট্যাবলেটের অন্তবর্তীকালীন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ব্যবহারে করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কোভিডে আক্রান্তদের দিনে দুবার করে ট্যাবলেটটি খাওয়ানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘মার্ক’ ট্যাবলেটটি তৈরি করেছে। তারা বলছে, মনিটরের বাইরে বাস্তবেই বেশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। অথচ, শুরুর দিকে ওষুধটির ট্রায়াল বন্ধ করতে বলা হয়েছিল।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন করার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, “ফলাফলের ব্যাপারটি ‘খুবই ভালো খবর।’” তবে, তিনি এসব তথ্যের বিষয়ে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-এফডিএ’র পর্যবেক্ষণের আগপর্যন্ত সতর্ক থাকার কথা বলেছেন।
প্রথম খাওয়ার ওষুধ
এফডিএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) অন্যান্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন পেলে এই ‘মোলনুপিরাভির’ হতে যাচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে মুখে সেবনযোগ্য প্রথম কোনো ওষুধ।
ট্রায়ালের ফল
মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য তৈরি ওষুধটিকে কোভিড ভাইরাসের জেনেটিক কোডের ভুলগুলোকে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে শরীরে এটি ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
৭৭৫ জন রোগীর তথ্যে যা পাওয়া গেছে
মোলনুপিরাভির খাওয়া রোগীদের ৭ দশমিক ৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কিন্তু, যাদের প্লাসবো (নিষ্ক্রিয় ওষুধ বিশেষ) ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪ দশমিক ১ শতাংশকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
মোলনুপিরাভির গ্রহণকারীদের কারও মৃত্যু হয়নি। তবে, প্লাসবো গ্রহণকারীদের আট জনের কোভিডে মৃত্যু হয়েছে। এসব তথ্য একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি। তবে, এখনও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ করা হয়নি।
টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত ভাইরাসের আবরণের স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এগোনো হয়। অন্যদিকে, এই ওষুধ একটি এনজাইমকে ধরে কাজ করে, যেন ভাইরাস নিজে আরও ভাইরাস উৎপাদন করতে না পারে।
অন্যান্য ভ্যারিয়্যান্টের বিরুদ্ধেও ট্যাবলেটের কার্যকারিতার ব্যাপারেও আশাবাদী ওষুধ কোম্পানিটি।
মার্ক-এর সংক্রমণ রোগ বিষয়ক আবিষ্কার বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডারিয়া হাজুডা বিবিসিকে বলেন, ‘যারা এখনও টিকা নেয়নি, অথবা টিকা নেওয়ার পরেও যাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ততটা তৈরি হচ্ছে না, তাদের জন্য এই ভাইরাসবিরোধী ওষুধের চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহামারি দূর করতে সাহায্য করতে পারে এই মোলনুপিরাভির।’
ট্রায়ালের ফলাফল বলছে, করোনা সংক্রমণের পর উপসর্গগুলো দেখা দিতে শুরু করলে প্রথম দিকেই মোলনুপিরাভির নিতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, এমন রোগীর বেলায় মোলনুপিরাভির ট্যাবলেটের ট্রায়ালে ভাল ফলাফল না আসায় ওই ট্রায়াল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্যবহারের অনুমোদন কবে?
কোভিড চিকিৎসায় ট্যাবলেটের ট্রায়ালের ফলাফল পাওয়া প্রথম কোম্পানি মার্ক। কিন্তু, কয়েকটি কোম্পানি করোনার চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার ভাইরাসবিরোধী পৃথক দুটি ট্যাবলেটের শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। অপরদিকে, সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি রোশ একই ধরনের ওষুধ তৈরিতে কাজ করছে।
২০২১ সালের শেষ নাগাদ এক কোটি রোগীর জন্য মোলনুপিরাভির উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মার্ক।
এফডিএ’র অনুমোদন পেলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১২০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের মোলনুপিরাভির কিনতে সম্মত হয়েছে।
সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার হরবি বিবিসিকে বলেন, ‘নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর একটি ওষুধ কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাপক অগ্রগতি হিসেবে গণ্য হবে।’
অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, ‘গবেষণাগারে মোলনুপিরাভিরের ফল আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আসল পরীক্ষা হচ্ছে, মানুষের কতটা কাজে লাগছে। প্রচুর ওষুধ এই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়। অন্তবর্তীকালীন ফলাফল ব্যাপকমাত্রায় আশাব্যঞ্জক।’