রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সেনারা : এইচআরডব্লিউ

রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। তাদের ওপর যৌন সহিংসতাও চালানো হয়েছে। আজ সোমবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরে রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকালে এসব ঘটনা ঘটেছে। উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নারী ও তরুণীদের ধর্ষণের ঘটনাসহ পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য মিয়ানমার সরকারের উচিত অতি শিগগিরই একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করা।
এইচআরডব্লিউ জানায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটির মংডু জেলার ৯টি গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা আগ্রাসীভাবে দেহতল্লাসি, রোহিঙ্গা নারী ও তরুণীদে ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ যৌন হামলায় অংশ নেয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায়। অনেকে বন্দুকের মুখে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করে।
এইচআরডব্লিউর গবেষকরা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮ জন রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১১ জন যৌন হামলার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১৭ জন নারী-পুরুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। যারা রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলার শিকার হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে নিজের স্ত্রী, বোনকে চোখের সামনে যৌন সহিংসতার শিকার হতে দেখেছে। এইচআরডব্লিউ ২৮টি ধর্ষণ এবং যৌন হামলার ঘটনার তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ গবেষক প্রিয়াঙ্কা মোতাপার্থি বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের ওপর এ ধরনের ভয়ঙ্কর আক্রমণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ ইতিহাসে একটি নৃশংস অধ্যায়। এ ছাড়া নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতার একটি বিরক্তিকর ইতিহাস। অবশ্যই সেনাবাহিনী এবং পুলিশে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এর দায় নিতে হবে।
প্রিয়াঙ্কা আরো বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধ তদন্তের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ব্যর্থতা তার বন্ধুপ্রতীম দেশ ও দাতাগোষ্ঠীদের কাছে এটা পরিষ্কার করেছে যে এ ঘটনার মূলে যাওয়ার জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত খুবই জরুরি।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৬৬ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৬৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে।