‘ছিটমহলের কেউ বাংলাদেশে আসতে চায় না’
ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহল থেকে কেউ বাংলাদেশে আসতে চায় না। এমনটিই জানিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির তরফে করা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা। সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ভুখণ্ডে থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে ৩১২ থেকে ৩১৭টি পরিবারের প্রায় ১৫০০ মানুষ ভারতে চলে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহল থেকে দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি কেউ।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত আজ শনিবার এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথাই জানালেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জরিপ ও সমীক্ষার পাশাপাশি নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহলে জনগণনার কাজও। আজ দিনশেষে ৯০ শতাংশের ওপর গণনা সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ২০১১ সালের জুলাই মাসে ভারতের তরফে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জনগণনার তুলনায় এবার ছিটমহলে জনসংখ্যা ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিভিন্ন ছিটমহল এলাকায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, বাসিন্দাদের মধ্যে জন্মহার এবং বৈবাহিক সূত্রে ছিটের বাসিন্দা হওয়ার হার দুটো মিলিয়ে ১৪ শতাংশের বেশি নয়।
দীপ্তিমান সেনগুপ্ত আরো জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে আসতে চাওয়া অধিবাসীদের আপাতত কোচবিহার জেলার দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা এবং মেঘালিগঞ্জের তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্পে আপাতত রাখা হবে।
ভারতীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভারতে আসা প্রতিটি পরিবার দুই বছরের জন্য ২০০ বর্গফুটের জায়গায় টিনের চালার একটি বাড়ি পাবেন। ছিটমহল বিনিময়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর কোচবিহারের তিনটি সীমান্ত দিয়ে তাঁদের ভারতে নিয়ে আসা হবে। এ সময় সীমান্তে স্থাপিত কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় বাসিন্দাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ রেখে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে তাদের টিকাদানের কাজটিও।
এদিক গতকাল শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল ছিটমহলে জনগণনার কাজ সরেজমিনে দেখতে দুই দেশের অভ্যন্তরের ছিটমহলগুলোতে যান। কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে তাঁরা ভারতে প্রবেশ করেন। প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান ভারতের কোচবিহার জেলার জেলা প্রশাসক পি উলগনাথন। সমন্বিত প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। আর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন। প্রতিনিধিদল ভারতীয় ভুখণ্ডের মেখলিগঞ্জ মহকুমার মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল কুচলিবাড়ি, বালাপুকুরি, মৃগিপুর অঞ্চলে মাথা গোনার কাজ ঘুরে ঘুরে দেখেন। কোচবিহারের জেলা প্রশাসক পি উলগনাথন এনটিভি অনলাইনকে জানান, সমন্বিত প্রতিনিধিদল মাথা গোনার কাজ খতিয়ে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মেখলিগঞ্জ মহকুমায় আজ শনিবার একাধিক জনগণনার ক্যাম্পে দুই দেশের গণনাকারী কর্মকর্তারা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ছিটমহলের বাসিন্দাদের তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে তবেই গণনায় নাম তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়ে সহায়তা করছেন বলেও জানান তাঁরা।
তবে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত অভিযোগ করে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেও একটি মহল কিছু রাজনীতিক ইস্যু তৈরির একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ছিটমহলের মানুষ এই সমস্ত রাজনৈতিক ইস্যুকে বরদাশত করবে না। দীর্ঘ লড়াই শেষে তাঁরা আজ নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। ফলে সেই পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা এবং অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত বরদাশত করা হবে না।
দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের প্রশাসনের কড়া নজর রয়েছে ছিটমহলের দিকে। ফলে সুযোগসন্ধানী কেউই এখানে এসে সুবিধা করতে পারবে না। জনগণনার কাজ শেষ হলেই ছিটমহলে প্রশাসনিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।
গত ৬ জুলাই থেকে দুই দেশের ছিটমহলে মাথা গোনার কাজ চলছে। আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। ভারতের কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগনাথন জানিয়েছেন,৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে কোনো ছিটমহলের অস্তিত্ব থাকবে না।