ওড়িশায় আছড়ে পড়ল দানা, মেদিনীপুরে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ধামারা ও ভিতরকণিকার মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা। পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ধামারায় দানার স্থলভাগের আছড়ে পড়া বা ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যত সময় যায়, ততই ধামারায় দানার শক্তি বাড়তে থাকে। আজ শুক্রবার সকালে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ হয়। ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় হচ্ছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, সকাল আটটা থেকে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হচ্ছে। বিমান ওঠা-নামা শুরু হয়ে যাবে। কলকাতায় বিমান চলবে সকাল ৮টা ৪০ মিনিট থেকে।
ওড়িশার ভদ্রকে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রবল ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়নি। কলকাতার আকাশে কালো মেঘ। প্রচুর গাছ পড়ে গেছে। প্রশাসন রাতভর গাছ সরিয়েছেন। তবে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর দানা পশ্চিমদিকে চলে যায়। ফলে ভিতরকণিকার পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ভিতরকণিকা তার ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির জন্য বিখ্যাত। এখানে কুমির সংরক্ষণ কেন্দ্র আছে। কচ্ছপ আছে। প্রচুর পরিযায়ী পাখি থাকে। তাছাড়া নানা ধরনের বন্যপ্রাণি আছে। তাদের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। ডিডাব্লিউর চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিঘায় বৃষ্টি শুরু হয়। সারাদিন ও সারারাত ধরে বৃষ্টি হয়। সঙ্গে ছিল জোরে হাওয়া। যত রাত বেড়েছে ততই ঝড়-বৃষ্টির দাপট বেড়েছে। ভোরে ঝড়ের দাপট বেড়েছে এবং সমুদ্র উত্তাল হয়েছে।
সত্যজিৎ জানিয়েছেন, দিঘার মেরিন ড্রাইভ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে বিশাল ঢেউ উঠছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি পড়ছে।
দিঘার পাশেই মন্দারমণিতে নিচু এলাকায় সমুদ্রের নোনা জল ভিতরে ঢুকে গেছে। সেখানেও প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচুর গাছ পড়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দানার ফলে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। বকখালিতে সমুদ্রে বড় ঢেউ উঠছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর গাছ পড়ে যায়। তবে সেখানে পরিস্থিতি ভয়ংকর খারাপ হয়নি বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
ডায়মন্ডবারবারে ৬৭ মিলিমিটার, দিঘায় ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির দাপট বাড়বে।
কলকাতার অবস্থা
শুক্রবার সকালে কলকাতায় বৃষ্টি হচ্ছে। ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন, রাত থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝমধ্যে দমকা হাওয়া আছে। তবে তাকে ঝড় বলা যায় না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে বিমান চলাচল বন্ধ আছে। গঙ্গার ফেরিঘাটও বন্ধ। শিয়লদহ দক্ষিণেও ট্রেন চলাচল সকালেও শুরু হয়নি। ফলে প্রচুর যাত্রী যারা দূরপাল্লার ট্রেনে শিয়ালদহে এসে পৌঁছেছেন, তারা আটকে পড়েছেন।
স্যমন্তক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারারাত নবান্ন থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছেন। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুরসভায় সারারাত ছিলেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও তার দপ্তরে ছিলেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।
কলকাতার মানিকতলা ও মোমিনপুরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েক ঘণ্টা ধরে বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।