ইরানে নাচার অপরাধে কিশোরী গ্রেপ্তার, নেচেই প্রতিবাদ নারীদের
ইরানে এক কিশোরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনলাইনে নিজেদের নাচার ভিডিও পোস্ট করছেন ইরানের নারীরা। আজ সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়।
বিবিসি জানায়, মায়েদেহ হুজাবরি নামের গ্রেপ্তার হওয়া ওই কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভিডিওর মাধ্যমে নিজের হাজার হাজার অনুসারীর উদ্দেশে ইরানি ও পশ্চিমা পপ সংগীতের সঙ্গে নাচানাচি করে।
জানা যায়, হুজাবরি ইনস্টাগ্রামে তাঁর অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩০০ নাচের ভিডিও শেয়ার করেছেন। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় তৈরির অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইরান সরকার।
গত শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন হুজাবরির প্রাথমিক স্বীকারোক্তি প্রচার করা হয়। তাতে হুজাবরি জানান যে নৈতিক অবক্ষয় তৈরির কোনো উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না, তিনি মূলত ইনস্টাগ্রামে নিজের ফলোয়ার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই কাজ করেন।
এদিকে, এই গ্রেপ্তারকে অন্যায্য দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকেই হুজাবরির নাচকে হ্যাশ ট্যাগের মাধ্যমে সমর্থন জানিয়ে নানা ভিডিও ও বার্তা শেয়ার করছেন। একজন হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘নাচা কোনো অপরাধ নয়।’
টুইটার ব্যবহারকারী ইরানি নারী মাশিন আলিনেজাদ তাঁর এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমি ১৯ বছর বয়সী মায়েদেহকে নাচার অপরাধে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তেহরানের এক পাবলিক পার্কে নেচেছি।’
ব্লগার হোসেইন রোনাগি মন্তব্য করেছেন, ‘সারা পৃথিবীর কোথাও যদি আপনি বলেন যে নাচার অভিযোগে, আনন্দ আর সৌন্দর্য ভাগাভাগির অপরাধে ১৭-১৮ বছরের মেয়েদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অথচ শিশু ধর্ষণকারীরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাহলে তারা হাসবে, কেননা এটা অবিশ্বাস্য।’
এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমি নাচছি, যাতে করে কর্তৃপক্ষ দেখতে পারে যে মায়েদেহর মতো কিশোরীদের গ্রেপ্তার করে তারা কোনোভাবেইও আমাদের আনন্দ আর আশা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
জানা যায়, ইরানে একান্ত পারিবারিক মানুষজন ছাড়া জনসমক্ষে বা বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সামনে ঘরোয়া পোশাক পরা কিংবা নাচার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
হুজাবরির ভিডিওতে হিজাব (মাথার স্কার্ফ) ছাড়াই তাঁকে নিজের ঘরে নাচতে দেখা যায়।
নাচার অপরাধে গ্রেপ্তারের ঘটনা ইরানে এটাই প্রথম নয়।
বিগত কয়েক সপ্তাহে আরো কয়েকজনকে এই অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে তারা ছাড়া পায়।
এ ছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে একটি শপিং মলে নারী ও পুরুষ একসঙ্গে নাচার অপরাধে মাশাদ শহরের ‘ইসলামিক গাইডেন্স ডিপার্টমেন্টে’র এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের আগস্টে নাচার অপরাধে চার পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানা যায়।
এর আগে ২০১৪ সালে তেহরানের রাস্তায় ও বাড়ির ছাদে ফ্যারেল উইলিয়ামের জনপ্রিয় গান ‘হ্যাপি’র সঙ্গে নাচার অপরাধে আরো ছয় ইরানিকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৯০টি চাবুক মারার আদেশ দেওয়া হয়, আরেকবার অপরাধ করলে সেটা কার্যকর হবে।