হাজারো সৌদি সেনা আটকের দাবি হুতিদের
সৌদি আরব ও ইয়েমেন সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে বড় ধরনের হামলার পর বিপুলসংখ্যক সৌদি সেনাকে আটক করার দাবি করেছে হুতি বিদ্রোহীরা।
সৌদি শহর নাজরানের কাছে সৌদি সেনার তিনটি ব্রিগেড আত্মসমর্পণ করেছে বলে দাবি করেছেন হুতি মুখপাত্র কর্নেল ইয়াহিয়া সারিয়া। গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হুতি মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, কয়েক হাজার সৌদি সেনাকে আটক করেছে হুতি বিদ্রোহীরা। এ ছাড়া আরো অনেক সৌদি সেনাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও ওই মুখপাত্র জানান। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনো হুতিদের দাবির বিষয়ে মুখ খোলেনি। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটির মধ্যে সংকট শুরুর পর এটাই হুতিদের সবচেয়ে বড় অভিযান বলে দাবি করেছেন কর্নেল ইয়াহিয়া।
হুতি মুখপাত্র বলেন, ‘সৌদি বাহিনী অনেক প্রাণ ও অস্ত্র হারিয়েছে।’ আটক সেনাদের আজ রোববার হুতিদের টিভি চ্যানেল আল মাসিরাহতে দেখানো হবে বলেও জানান কর্নেল ইয়াহিয়া।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি বড় তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তেলের বিশ্ববাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হুতিদের দাবি, তারাই এ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এ হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে সমালোচনা করে আসছে। আর ইরান এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে শুরু থেকেই।
পেছনের ঘটনা কী?
২০১৫ সালে ইয়েমেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বাহ মনসুর হাদি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেশটির রাজধানী সানা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে হুতিরা। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের প্রায় পুরোটা দখল করে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা। সেখান থেকেই তারা সৌদি আরবে মর্টার আর মিসাইল ছুড়ে মারছে।
এদিকে হাদিকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব এবং আরো আটটি সুন্নি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ একজোট হয়ে ইরানের সমর্থিত হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
২০১৭ সালের নভেম্বরে রিয়াদে ইয়েমেনের মিসাইল পড়ার পর দেশটির চারদিকে অবরোধ জোরালো করে সৌদি আরব।
প্রায় প্রতিদিনই ইয়েমেনে বিমান হামলা চালায় সৌদি সামরিক জোট, আর হুতিরাও পাল্টা জবাবে প্রায়ই সৌদি আরবে মিসাইল হামলা চালায়।
এ সংঘাতের কারণে ইয়েমেনে বিশ্বের ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা কিংবা নিরাপত্তা প্রয়োজন। এর মধ্যে এক কোটি ইয়েমেনবাসী বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে আছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের সংকটের জেরে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।