তালেবানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের হস্তক্ষেপের ডাক
আফগানিস্তানে নারী অধিকার খর্বের সমালোচনা করে দেশটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা গর্ডন ব্রাউন৷ তবে, দেশটিতে শরিয়া আইন পরিবর্তনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ৷
প্রায় দুই বছর আগে তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশটিতে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকার খর্বের জোরালো সমালোচনা করে এলেও পরিস্থিতি বদলানোর ক্ষেত্রে কার্যত অসহায় রয়েছে৷ তালেবান সরকার নারীদের শিক্ষা, গতিবিধি, উপার্জনসহ বিভিন্ন কার্যকলাপের ওপর পরপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে৷ এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা তালেবানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানালেন৷
জাতিসংঘের বিশ্ব শিক্ষা দূত গর্ডন ব্রাউন মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) উদ্দেশে আফগানিস্তানে লিঙ্গ বৈষম্যকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার ডাক দিয়েছেন৷
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্রাউন বলেন, তিনি আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানকে সে বিষয়ে চিঠি লিখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘গোটা বিশ্বে মেয়ে ও নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্য এই দৃষ্টান্ত বরদাশত করলে অন্যরাও সেই পদক্ষেপ নিতে পারে৷’ আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানের দপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷ তিনি গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছেন৷
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রশাসন ১২ বছরের বেশি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ নারীদের সাহায্যকারী সংগঠনে কাজও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিউটি পার্লার বন্ধ, পার্কে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ও পুরুষ ‘অভিভাবক’ ছাড়া নারীদের গতিবিধি সঙ্কুচিত করার মতো পদক্ষেপের কারণে তালেবানের প্রবল সমালোচনা করা হচ্ছে৷ তালেবানের যুক্তি, ইসলামি আইনের নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে৷
গর্ডন ব্রাউনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তালেবানের ৮০টি অধ্যাদেশের মধ্যে ৫৪টি নারী অধিকার খর্ব করেছে৷ জাতিসংঘের দূত গর্ডন ব্রাউনের মতে, তালেবানের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে৷ কাবুলে কয়েকজন কর্মকর্তা মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর পক্ষে কথা বললেও কান্দাহারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার বিরোধিতা করছে৷
গর্ডন ব্রাউন এই ধর্মীয় নেতাদের মত বদল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন৷ তাঁর মতে, ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে নারীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা যে ভুল, সেটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে৷ মুসলিম দেশগুলোকে কান্দাহারে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে তালেবান নেতাদের বোঝানোর আহ্বান জানান তিনি৷
নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ তুলে নিতে তালেবান নেতৃত্বকে রাজি করানোর চেষ্টা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন গর্ডন ব্রাউন৷
সোমবার (১৪ আগস্ট) সংবাদ সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বর্তমান অনুশাসন অপরিবর্তিত থাকবে৷ আফগানিস্তানে তালেবান খোলা মনে শাসন করছে৷ ইসলামি শরিয়া আইনের ভিত্তিতে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বড় হুমকিও দেখছে না সরকার৷’