তালেবানের নিষেধাজ্ঞা : গোপনে ব্যবসা করছেন আফগান নারীরা
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর নারীরা চাকরি হারান৷ তাদের অনেকে গোপনে ব্যবসা শুরু করেছেন৷ তারা নিজেদের বাড়িতে জিম, বিউটি সেলুন ও স্কুল পরিচালনা করছেন৷
এসব নারীদের একজন ৪৪ বছর বয়সী লায়লা হায়দারি৷ কাবুলে তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিল৷ সেখানে সন্ধ্যায় সংগীত ও কবিতা পাঠের আসর বসতো৷ বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও বিদেশিদের কাছে রেস্টুরেন্টটি জনপ্রিয় ছিল৷ ব্যবসার আয়ের একটি অংশ দিয়ে মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি৷
তবে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর সেটি ভেঙে ফেলেন তাদের সমর্থকেরা৷ ওই ঘটনার পাঁচ মাস পর গোপনে একটি হ্যান্ডিক্রাফট সেন্টার খোলেন হায়দারি৷ সেখানে পোশাক তৈরি ও অলংকার বানিয়ে টাকা আয় করছেন প্রায় ৫০ জন নারী৷ তারা মাসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা আয় করেন৷ হায়দারি বলেন, ‘যে নারীদের কাজ খুব দরকার, তাদের জন্য আমি এই প্রতিষ্ঠানটা শুরু করেছি৷’
হ্যান্ডিক্রাফট ব্যবসার কিছু অংশ দিয়ে মেয়েদের একটি গোপন স্কুলে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন হায়দারি৷ সেখানে প্রায় ২০০ মেয়ে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিখছে৷ কিছু মেয়ে স্কুলে গিয়ে এবং বাকিরা অনলাইনে পড়াশোনা করছে৷
নারীদের জন্য বেশির ভাগ চাকরি নিষিদ্ধ করেছে তালেবান৷ মেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিতে পারছে না৷ মেয়েদের চলাফেরার ওপরেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ তবে, হাজার হাজার নারী তাদের বাড়িতে ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন৷ এতে সাধারণত বাধা দিচ্ছে না তালেবান৷ পাশাপাশি হায়দারির মতো গোপন প্রতিষ্ঠানও কাজ করে যাচ্ছে৷
২৫ বছর বয়সী দর্জি ওয়াজিহা শেখাওয়াত আগে একা পাকিস্তান ও ইরানে গিয়ে কাপড় কিনে আনতেন৷ তালেবানের নিয়ম অনুযায়ী, এখন তিনি একা ভ্রমণ করতে পারেন না৷ কিন্তু, সঙ্গে একজনকে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে আর্থিক কারণে সম্ভব নয়৷ এই অবস্থায় তিনি তার পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে কাপড় কিনতে পাঠিয়েছিলেন৷ তবে, তিনি ভুল কাপড় কিনে আনেন৷ ওয়াজিহা শেখাওয়াত বলেন, ‘‘আমি আগে নিয়মিত বিদেশে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে যেতাম, কিন্তু এখন কফি পান করতেও বাইরে যেতে পারি না৷ দম বন্ধ লাগে৷ মাঝেমধ্যে আমি ঘর বন্ধ করে চিৎকার করি৷’
এদিকে, পার্টি ড্রেস ও চাকরিজীবী মেয়েদের পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওয়াজিহার মাসিক আয় ৬০০ ডলার থেকে কমে ২০০ ডলার হয়েছে৷
আফগানিস্তানে বিধবা, বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া ও একা থাকা নারীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ৷ তাদের অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী৷ আবার অনেকের মাহরাম (সঙ্গে যাওয়ার মতো পুরুষসঙ্গী) কেউ নেই৷
২০১৫ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর সাদাফ (ছদ্মনাম) কাবুলে বিউটি পার্লার চালিয়ে পাঁচ সন্তান লালনপালন করতেন৷ এখন তালেবান তার পার্লার বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ঘরে ব্যবসা শুরু করেছেন৷ কিন্তু, তার অনেক ক্রেতা চাকরি হারানোয় পার্লারে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন৷ তাই সাদাফের মাসিক আয় ৬০০ ডলার থেকে কমে ২০০ ডলার হয়েছে৷
গত মাসে তালেবান দেশের সব বিউটি পার্লার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে৷ ফলে ৬০ হাজারের বেশি নারী চাকরি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাদাফ আশঙ্কা করছেন, ঘরে ব্যবসা করায় তালেবান তার পেছনে লাগতে পারে৷