ইসরায়েলি হামলায় গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে পালাচ্ছে মানুষ
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এগিয়ে আসতে থাকায় উপত্যকাটির মধ্যাঞ্চল থেকে প্রায় দেড় লাখ ফিলিস্তিনিকে পালাতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসির।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হামাসের সশস্ত্র শাখা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংকবহর শহরের পূর্ব প্রান্তের বুরেইজি শরণার্থী শিবিরের কাছে পৌঁছে গেছে। সামরিক বাহিনী সম্প্রতি বুরেইজি শিবিরে স্থল অভিযানের আওতা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী নুসেইরাত ও মাগহাজি শরণার্থী শিবিরেও সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে গতকাল বৃহস্পতিবারও (২৮ ডিসেম্বর) মারা গেছে অনেক ফিলিস্তিনি। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
যুদ্ধ শুরু হয় গত ৭ অক্টোবর, নজিরবিহীন এক হামলায় হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে এক হাজার ২০০ লোককে হত্যা রে। এ ছাড়া হামাস আরও ২৪০ জন লোককে অপহরণ করে। এরপর থেকেই অবিরাম বিমান হামলায় বোমাবর্ষণ ও স্থলপথে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের ১১ সপ্তাহব্যাপী হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৩০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে যাদের বেশিরভাগই নিরীহ শিশু ও নারী। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল থেকে সব লোকজনকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ এলাকার বুরেইজি ও নুসেইরাত শিবির থেকেও ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেখানকার ৯০ হাজার অধিবাসী ও ৬১ হাজার বাস্তচ্যুত লোকজনকে উপত্যকার দক্ষিণ দিকে দেইর আল-বালাহ শহরের দিকে চলে যাওয়া নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ জানায়, এসব লোকদের যাবার কোনো জায়গা নেই। কারণ ইতোমধ্যে ওই এলাকাগুলোতে হাজার হাজার বাড়িঘর হারানো লোকজনের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র গাজা শাখার পরিচালক টম হোয়াইট জানান, গাজা সীমান্তের রাফাহ শহরে লোকজনকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘উপত্যকার এত অল্প জায়গায় এত লোকের জায়গা হবে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রাফাহর একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২০ জন নিহত হয়ছে। ওই ভবনটিতে বাড়িহারা বেসামরিক লোক থাকতেন।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, আল মাগহাজি শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় ৫০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বেইত লাহিয়ায়। সেখানে একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস করে দেওয়া হলে ৩০ জন নিহত হয়।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, খান ইউনিসে আল-আমাক হাসপাতালে কাছে ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হলে ১০ জন মারা যায়।
গাজার অধিবাসীরা জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবারও ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলে। ইসরায়েলি ট্যাংক বহর গাজার উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে জনবহুল বুরেইজি আশ্রয় শিবিরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।