নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কে পি শর্মা অলি
নেপালে দেশটির পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড গতকাল শুক্রবার (১২ জুলাই) আস্থা ভোটে হেরে যান। এতে দেশটিতে নতুন জোট সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। নতুন এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে সরকার গঠন করেছিলেন পুষ্পকমল দাহাল। তখন তৃতীয়বারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাকে তিনবার জোট বদলাতে হয়। আর পাঁচবার পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়। গতকাল পঞ্চমবারের অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি।
ইউএমএল পার্টির আইনপ্রণেতা যোগেশ ভট্টরাই বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে নতুন জোট সরকারের প্রয়োজন ছিল। এর মধ্য দিয়ে নেপালে ২০ মাস ধরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০০৮ সালে নেপালে ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। এরপর থেকে গণতান্ত্রিক নেপালে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা। কে পি শর্মা অলি নতুন সরকার গঠন করলে সেটা হবে ২০০৮ সালের পর দেশটিতে ১৪তম গণতান্ত্রিক সরকার।
নেপালের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সবসময় বড় দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের কড়া নজরদারিতে থাকে। হিমালয় ঘেঁষা নেপালে এই দুই দেশের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। দিল্লি ও বেইজিং নেপাল ও দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে চায়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সরকারের ওপর থেকে গত সপ্তাহে সমর্থন তুলে নেয় অন্যতম বৃহত্তম জোটসঙ্গী লিবারেল কমিউনিস্ট ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন কে পি শর্মা অলি। এরপর পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় ৬৯ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালের সামনে দুটি বিকল্প খোলা ছিল। হয় তাকে সরকারপ্রধানের পদ ছাড়তে হবে, নতুবা পার্লামেন্টে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। পুষ্পকমল দাহাল দ্বিতীয় বিকল্প বেছে নিয়ে ব্যর্থ হন।
কে পি শর্মা অলি এর আগে দুবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গত জুনের শেষের দিকে তিনি মধ্যপন্থি দল নেপালি কংগ্রেসের (এনসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। এর ফলে পার্লামেন্টে এই জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথ সুগম হয়। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, কে পি শর্মা অলি নতুন সরকার গড়বেন। গতকাল পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পুষ্পকমল দাহাল হেরে যাওয়ার পর কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বে নতুন জোট সরকার কবে নাগাদ দায়িত্ব নেবে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
ভোটাভুটিতে উতরে যেতে সাবেক মাওবাদী নেতা পুষ্পকমল দাহালের ২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে ন্যূনতম ১৩৮টি ভোট দরকার ছিল। গতকাল পার্লামেন্টে হাজির ছিলেন ২৫৮ সদস্য। তাদের মধ্যে পুষ্পকমল দাহালের পক্ষে ভোট দেন মাত্র ৬৩ জন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৪টি। বাকি একজন ভোটদানে বিরত ছিলেন।
স্পিকার দেব রাজ ঘিমিরি ভোট গণনা শেষে বলেন, আস্থা ভোটে পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহালকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেপালি কংগ্রেস দেশটির পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউএমএল। এই দুটি দল এখন নেপালে জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।