গুজবে রণক্ষেত্র উদয়পুর : মুসলিম সংখ্যালঘুদের বাড়ি-প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ
দশম শ্রেণির এক মুসলিম ছাত্র সনাতন ধর্মের ১০ বছর বয়সী আরেক ছাত্রকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ভারতের রাজস্তানের উদয়পুর। সংঘর্ষের পর দিন গত শনিবার (১৭ আগস্ট) অভিযুক্ত ছাত্রের বাড়িসহ রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বেশ কিছু বাড়িঘর বুলড্রোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট। এলাকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এদিন (শনিবার) বাজারগুলো খোলা হয় এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার তারা পায়নি।
দ্য ডন ও কলকাতা ভিত্তিক বাংলা দৈনিক পুবের কলমে জানিয়েছে, শুক্রবার শুরু হয় এই সংঘর্ষ। এ সময় মুসলিমদের বাড়িঘর, গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলেছে। এরপর শনিবার সকালে নোটিশ দিয়ে দুপুরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বেশকিছু বাড়িঘর বুলড্রোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও রাজস্তানে বিজেপি সরকার বলছে, মুসলিমদের বাড়িঘর বনবিভাগের জায়গায় অবস্থিত হওয়া তা বেআইনি ছিল। এজন্য তা ভেঙে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
পুবের কলমে বলা হয়েছে, উদয়পুরের কালেক্টর অরবিন্দ কুমার পোসওয়াল জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আহত ছাত্রকে চিকিৎসার জন্য বিশেষ বিমানে করে জয়পুর থেকে উদয়পুরে তিন চিকিৎসকের একটি টিমকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া গুজব কান না দিতে জনগণকে আবেদন করেছেন কালেক্টর।
দ্য ডন বলছে, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) মুসলিম ছেলের পরিবারকে ‘বুলডোজারের ন্যায়বিচার’কে কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা বিজেপি সরকারের বেআইনি পদক্ষেপকে সাম্প্রদায়িক এবং বৈষম্যমূলক বলে বর্ণনা করেছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষের ‘বাছাই এবং বেছে নেওয়া’ পদ্ধতিটি মৌলিক অধিকার এবং প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন ছিল বলে উল্লেখ করেছে পিইউসিএল। যদিও দেশটির শীর্ষ আদালত মুসলিম ছেলের বাড়ি ভেঙে ফেলাকে এরইমধ্যে বেআইনি বলে সমালোচনা করেছেন।
পিইউসিএল সভাপতি কবিতা শ্রীবাস্তব বলেছেন, সেখানে ২০০টিরও বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে, তবে আইনের ধোঁয়া তুলে শুধু অভিযুক্ত কিশোরের পরিবারকেই কর্তৃপক্ষ তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা থেকে লাভবান হওয়া কিছু দুর্বৃত্তদের ক্ষমতার লালসা মেটানোর জন্য তারা এটি করেছে।
এদিকে, সংঘর্ষ রুখতে ডিভিশনাল কমিশনার রাজেন্দ্র ভট্ট শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য উদয়পুর শহর, বেদলা, বদগাঁও, ব্লেচা, দেবারি, একলিংপুরা, কানপুর, ধেকলি এবং ভুওয়ানা এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছেন। সেই নিদেশনা আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।