ট্রাম্পের ছবিসহ হোয়াইট হাউসের পোস্ট : ‘বিদায়, রাশা’

লেবাননের চিকিৎসক রাশা আলাওয়িকে বহিষ্কারের পর হোয়াইট হাউস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবি শেয়ার করেছে, যার ক্যাপশন ছিল ‘বিদায়, রাশা’।
ডা. আলাওয়িকে গত সপ্তাহে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে। অভিযোগ ছিল, তিনি হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর জানাজায় অংশ নিয়েছেন এবং তাকে সমর্থন করেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও চিকিৎসক ডা. রাশা আলাওয়িকে বহিষ্কার করেছে, কারণ তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নাসরুল্লাহর প্রতি তার সমর্থনের কথা ‘স্পষ্টভাবে স্বীকার’ করেন বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশিয়া ম্যাকলফলিন বলেন, ‘ভিসা অধিকার নয়, বরং একটি বিশেষ সুবিধা। যারা আমেরিকানদের হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করে বা সমর্থন করে, তাদের ভিসা বাতিল করা যুক্তিসঙ্গত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’

তবে বিভাগটি জানায়নি কীভাবে তারা জানতে পেরেছে যে ডা. আলাওয়ি নাসরুল্লাহর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া তাকে কোনো অপরাধ বা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি।
ডা. আলাওয়ির এক আত্মীয়ের পক্ষে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী স্টেফানি মারজুক গতকাল সোমবার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে, প্রভাবশালী আইন সংস্থা আর্নল্ড অ্যান্ড পোর্টার মামলাটি লড়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত থাকলেও, রোববার (১৬ মার্চ) রাতে তারা ‘বিষয়টি আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করার পর’ মামলা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
গত সোমবার মামলার শুনানি স্থগিত করা হয়, কারণ ডা. আলাওয়ির আত্মীয় ইয়ারা চেহাবের আইনজীবী মামলার প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছেন।
ফেডারেল প্রসিকিউটর মাইকেল স্যাডি সোমবার সকালে মামলার একটি নতুন আবেদন দাখিল করেছেন, তবে তা সিল করে রাখা হয়েছে।
৩৪ বছর বয়সী ডা. আলাওয়ি লেবাননের নাগরিক এবং সম্প্রতি তার নিজ দেশে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার সময় বোস্টন বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলার বিচারক লিও টি. সোরোকিন মার্কিন সরকারকে নির্দেশ দেন যে, বহিষ্কারের আগে আদালতকে ৪৮ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে। কিন্তু তখনই বোস্টনে রানওয়েতে অপেক্ষমাণ একটি বিমানে তাকে তোলা হয়, যা পরে প্যারিস হয়ে লেবাননে চলে যায়।
মার্কিন সরকার সোমবার জানায়, যখন ডা. আলাওয়ির ফ্লাইট ছেড়ে যায় তখনও বিচারকের নির্দেশ সম্পর্কে তারা অবগত ছিল না। তবে, আইনজীবী ক্লেয়ার সন্ডার্স আদালতে দাখিল করা এক হলফনামায় জানান, তিনি শুক্রবার রাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে সিবিপি কর্মকর্তাদের আদালতের আদেশ সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন।
ডা. আলাওয়ি ২০১৫ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে ফেলোশিপ করেন এবং পরে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে কাজ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে তার সর্বশেষ ভিসা ছিল এইচ১-বি, যা বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের জন্য অনুমোদিত। এর আগে, তিনি জে-১ ভিসা নিয়েছিলেন, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির মুখপাত্র ব্রায়ান ক্লার্ক বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’
কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞদের অভাবের মধ্যে ডা. আলাওয়ির মতো বিদেশি চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ব্রাউন মেডিসিনের কিডনি প্রতিস্থাপন বিভাগের চিকিৎসক ড. জর্জ বেইলিস বলেন, ‘ডা. আলাওয়ি অত্যন্ত প্রতিভাবান ও যত্নশীল চিকিৎসক।’
তিনি জানান, ডা. আলাওয়ির সঙ্গে কখনও রাজনৈতিক আলোচনা করেননি।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটি প্রশাসন রোববার এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ‘পরিস্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ব্যক্তিগত ভ্রমণ স্থগিত বা বিলম্বিত করা শ্রেয়।’