সংস্কৃতির নতুন সংকট : প্রজাতন্ত্রের ভাষানীতি
আজ হইতে একশত বৎসর আগে বাংলা ভাষায় ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি চালু ছিল না। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জানাইতেছেন, শব্দটি তিনি ১৯২১ কি ১৯২২ সালের দিকে পশ্চিম ভারতীয় কোন ভাষা-খুব সম্ভব গুজরাটি- হইতে আহরণ করিয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুমোদন লাভ করিয়া শব্দটি বাংলা ভাষার গৌরব সার্থক করিয়াছে। তবে কোন কোন মহল শব্দটি সহজে গ্রহণ করেন নাই। তাঁহারা ‘সংস্কৃতি’র পরিবর্তে সমার্থক শব্দ ‘কৃষ্টি’ চালাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। যেমন : পাকিস্তান যুগের শেষ দিকে স্কুলপাঠ্য একটি নতুন বহির নাম স্থির হইয়াছিল ‘পাকিস্তান : দেশ ও কৃষ্টি’।
‘কৃষ্টি’ শব্দটি এমন খারাপ শব্দ নহে। জবরদস্তি চালাইতে গিয়া যত হাঙ্গামা বাধিয়াছিল। ‘সংস্কৃতি’ শব্দ ব্যবহার না করিবার জন্য কেহ কেহ ‘তাহজিব’ ও ‘তমদ্দুন’ প্রভৃতি শব্দও এস্তেমাল করিতেন। দেখা যাইতেছে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করিয়া ‘সংস্কৃতি’ আজও টিকিয়া রহিয়াছে। বাংলাদেশে একটি সরকারি দপ্তরের নাম দাঁড়াইয়াছে ‘সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়’। বদরুদ্দীন উমর সাহেবের একটি পত্রিকা অনেকদিন হইল চলিতেছে। নাম ‘সংস্কৃতি’।
‘সংস্কৃতি’ কথাটা লইয়া আরও একটি গোল আছে। কথাটার একটা অর্থ পাইতেছি ‘সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ যে অর্থে সে অর্থে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বাংলা একাডেমি কি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিও এই মন্ত্রণালয়ের অঙ্কশায়ী। এই সংকীর্ণ অর্থে সংস্কৃতি বলিতে বিশেষ বিশেষ কার্য বুঝায়। যেমন সঙ্গীত, নাটক, কবিতা। এই সকল অর্থে সকলের সংস্কৃতি নাই, কাঁহারও কাঁহারও আছে।
জীবনানন্দ দাশ কহিয়াছিলেন, সকলেই কবি নহেন কেহ কেহ কবি। ‘সংস্কৃতি’ কথাটির সংকীর্ণ অর্থে সকলের সংস্কৃতি নাই। সৌভাগ্যের মধ্যে, সংস্কৃতি কথার আরও একটি অর্থ আছে। সেই অর্থে শব্দটি যাঁহারা আমল করেন তাঁহাদিগকে আমরা নৃ-তত্ত্ববিদ বা সমাজতত্ত্ববিদ বলিয়া জানি। নৃ-তত্ত্ববিদদের অর্থে সংস্কৃতি বলিতে বিশেষ বিশেষ কার্য বুঝায় না, বুঝায় সামান্য বা সর্বজনীন কাণ্ড। এই অর্থে মানুষ মাত্রেরই সংস্কৃতি আছে।
বাংলাদেশে ‘সংস্কৃতি’ কথাটা মুখে আনিলেই আমরা একটা দোটানায় পড়িয়া যাই। বাংলাদেশে কি কোন সংস্কৃতি আছে? যদি বলেন ‘আছে’ তবে তাহা কোন সংস্কৃতি? যদি বলেন এ দেশে বিশেষ সংস্কৃতি ‘নাই’- তবে আপনি বলিতেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থে। সেই অর্থেও কিছু কর্মকাণ্ড এ দেশে আছে। তবে নৃ-তত্ত্বের অর্থে সংস্কৃতি নাই বলিলে আপনি বলিতেছেন এ দেশে কোন মানবগোষ্ঠীই নাই। আর যদি বলেন, না, না, বাংলাদেশে সংস্কৃতি আছে তো আপনাকে আরেক প্রশ্নের সামনে দাঁড়াইতে হয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতিটা কি পদার্থ? তাহার পরিচয় কি?
১
আরো খোলামেলা করিয়া বলি। বাংলাদেশের নামটা স্থির হইয়াছে ‘বাংলা’ শব্দ হইতে। ‘বাংলা’ একটি ভাষার নাম। আবার ‘বাংলা’ একটি দেশের নামও। একদা শুদ্ধ পূর্ব বাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশ এলাকাকেই বাংলা বলা হইত। এখন রাঢ় ও বরেন্দ্রকেও বড় অর্থে বাংলার অংশ মনে করা হয়। কি বিচিত্র! বাংলা ভাষায় যাঁহারা কথাবার্তা বলেন এখন তাঁহাদিগকেই বাঙ্গালি বলা হয়। অর্থাৎ বাঙ্গালি শব্দের এক অর্থ বাংলাওয়ালা। বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী বাঙ্গালি শব্দের আরেক অর্থ দাঁড়াইয়াছে ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ (বা প্রজা)। এই জায়গায় একটা গোল দাঁড়াইতেছে। বাংলাদেশের অনেক মানবগোষ্ঠী নিজেদের ‘বাঙ্গালি’ বলিয়া পরিচয় দিবেন না। তাঁহাদের জবরদস্তি ‘বাঙ্গালি’ বানাইবার বুদ্ধি কে দিল? ইহাকেই বলে ‘সাগর সেচার কাম’ বা ‘মাথায় গন্ধমাদন তুলিয়া লওয়া’।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি নানান সংস্কৃতির মেলা। একই অর্থে বাংলাদেশের জনসাধারণও নানান জনগোষ্ঠীর মিলনের ফল। স্বীকার করিতে দোষ নাই-এই মেলারই মধ্যমণি বাংলাওয়ালা জনগোষ্ঠী। তাই দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’ হইয়াছে। অন্য মানবগোষ্ঠীর জনসাধারণ কি কখনো এ দেশের ‘বাংলাদেশ’ নামে কোন ওজর বা আপত্তি দেখাইয়াছে? তাঁহারা যদি বাঙ্গালি নামে আপত্তি করেন তাহাও তো অকারণ নহে। বাঙ্গালি শব্দের এক ঢিল দিয়া সামান্য ও বিশেষ দুই পাখি মারা যাইবে না। অথচ বাংলাদেশ রাষ্ট্র তাহাই চেষ্টা করিতেছে। বিশেষ গোষ্ঠীকে বাঙ্গালি বলিলে সামান্য জাতিকেও তাহা দিয়া নির্দেশ করা যাইবে না। ইহা শিখিতে আরও কত রক্ত ঢালিতে হইবে?
বাংলাদেশে সংস্কৃতি লইয়া আরো একটি গোল আছে। যাঁহারা নিজেদের ‘বাঙ্গালি’ বলেন এই গোল তাঁহাদের মধ্যে। যাঁহারা বাংলায় কথাবার্তা বলেন তাঁহারা কেহ বৌদ্ধ, কেহ হিন্দু, কেহ মুসলমান, কেহ খ্রিস্টান, কেহ বা অন্য ধর্মাবলম্বী। সকলেই কবুল করিবেন, বাংলাদেশে সংস্কৃতির একটি বড় পদার্থ বাংলা ভাষা। এ পর্যন্ত বাংলা ভাষার যত নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে তাহার মধ্যে ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’ (বা চর্যাপদ) প্রাচীনতম। দোহার ভাষা এ কালের বাংলা নহে। এ কালের বাংলা চালু হইয়াছে বাংলাদেশে তুর্কি ও পাঠান শাসন চালু হইবার পরে। তুর্কি ও পাঠান শাসনকে আকছার মুসলমান শাসনও বলা হইয়া থাকে। আর আমরা জানি স্বল্পকালের ইংরেজ রাজত্বে বাংলা ভাষার আরও শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে। ইংরেজ রাজত্বের যুগকে খ্রিস্টান যুগও বলা যাইতে পারে। কিন্তু আজিকালি কেহ তাহা বড় বলেন না।
এক কথায় বাংলাদেশের বাঙ্গালি সংস্কৃতি দিনে দিনে গড়িয়া উঠিয়াছে। তাহাতে দেখা যায়, আছে তিন বড় বড় যুগ- বৌদ্ধ যুগ, মুসলমান যুগ ও ইংরেজ যুগ। হিন্দু যুগ বলিয়া বাংলার আলাদা একটা যুগ নির্দেশ করা কঠিন। তাহার পরও কেহ কেহ একদা বাংলা ভাষাকে হিন্দুর ভাষা বলিয়া বাদ দিতে চাহিয়াছিলেন। সেই চেষ্টা সফলকাম হয় নাই। কিন্তু এখনও তাঁহারা বলিতে চাহেন বাংলায় তুর্কি শাসন প্রবর্তনের আগের সংস্কৃতিটা আমল করার মতন পদার্থ নহে। ইহাদের মতে মুসলমান যুগ হইতেই বাংলা ভাষার শুরু-বাংলা সাহিত্যের জন্ম।
এই ভাবধারার প্রতিপক্ষ পাওয়া যায় তাঁহাদের মধ্যে যাঁহারা মনে করেন বাঙ্গালি সংস্কৃতি মানে ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির আগের কালের সংস্কৃতি। ইহার সহিত তাঁহারা বড়জোর ১৭৫৭ সালের পরের সংস্কৃতি- মানে ইংরেজ যুগটার সংস্কৃতি- স্বীকার করিবেন। মধ্যখানের যুগটা তাঁহাদের মতে বাঙ্গালি সংস্কৃতির যুগ নহে, মুসলমান সংস্কৃতির যুগ। ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশে প্রচারিত হইবার ফলে বাঙ্গালি সংস্কৃতিতে যে পরিবর্তনটা হইয়াছে তাহার পরিচয় লইয়া বহুদিন গোল বাঁধিয়াছিল।
২
ইংরেজ যুগে অভিযোগ উঠিয়াছিল, মুসলমান লেখকরা বাংলা ভাষায় উল্লেখ করিবার মতন বিশেষ কিছু লেখেন নাই। বিশ শতকের গোড়া হইতে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ দেখাইতে শুরু করিলেন, না, না, মুসলমানরা ইংরেজি ১৬০০ ও ১৭০০ শতাব্দী হইতেই বাংলায় লিখিতেছেন এবং সেই লেখা একান্তই ফেলনা পদার্থ নহে। দীনেশচন্দ্র সেন ও অন্যান্য লেখকরা দেখাইলেন বাংলাদেশের গ্রামের যে চাষিরা বাংলা সাহিত্য রচনা করিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে অর্ধেকই তো মুসলমান। এই সব লেখা সম্বন্ধে দীনেশবাবু বলিয়াছেন, ‘এই বিরাট সাহিত্যের সূচনা আমি যেই দিন পাইয়াছিলাম, সেই দিন আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। আমি সেই দিন দেশ-মাতৃকার মোহিনীমূর্ত্তি দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছিলাম, আমাদের বাংলা ভাষার শক্তি ও প্রসার দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছিলাম এবং হিন্দু ও মুসলমানের যে যুগলরূপ দেখিয়াছিলাম- তাহাতে চক্ষু জুড়াইয়া গিয়াছিল।’ এই কথা উদ্ধারপূর্বক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জানাইতেছেন, ‘এ পর্য্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৪৫টি পল্লীগাথা প্রকাশ করিয়াছে। ইহার মধ্যে ২৩টি মুসলমান কবির রচিত।’ মীর মশাররফ হোসেন হইতে কাজী নজরুল ইসলাম পর্যন্ত আধুনিক লেখকরা স্ব স্ব কীর্তির মধ্যে সেই সত্যেরই প্রতিধ্বনি করিলেন।
পাকিস্তান যুগে অভিযোগটা উঠিয়াছিল অন্যদিক হইতে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের জবানিতে এই অভিযোগের বয়ান এই রকম: ‘আজ বাংলা সাহিত্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপিত হইয়াছে যে, এই সাহিত্য ইসলামী নহে, মুসলিম জীবনের কথা তার জীবনাদর্শ ইহাতে বিশেষভাবে রূপ লাভ করে নাই।’ আবদুল করিমের মতে, ‘আধুনিক বঙ্গ সাহিত্য সম্বন্ধে এই অভিযোগ হয়তো মিথ্যা নহে, কিন্তু বাংলা পুঁথি সাহিত্য সম্বন্ধে এই অভিযোগ ত এক বিন্দুও সত্য নহে।’
মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, আবদুল করিম ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য, বিশেষতঃ মধ্যযুগের মুসলমান সাহিত্য সম্বন্ধে’ ‘অদ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ।’ আর আবদুল করিম বলিতেছেন, ‘পুঁথি সাহিত্য আগাগোড়াই ইসলামী, তাহার প্রতিটি পাতা মুসলমানী কথায় ভরপুর। তাহার লেখকেরা মুসলমান, তাহার বিষয়বস্তু মুসলমানী, নবী-রসুল ও মুসলিম দরবেশ আওলিয়াদের কাহিনী লইয়াই অধিকাংশ পুঁথি রচিত। মুসলিম মারফতী কথা এই সাহিত্যের এক বিশেষ অংশ জুড়িয়া রহিয়াছে।’ তাহার পরও মুসলমান সমাজের এককালীন নেতারা এই সাহিত্যকে অবজ্ঞা করিয়াছেন। আবদুল করিমের অভিযোগ : ‘আগাগোড়া ভাবে ভাষায় ইসলামী হওয়া সত্ত্বেও এই পুঁথি সাহিত্যের প্রতি আমাদের রাজপুরুষেরা, আমাদের ধনীরা, আমাদের শিক্ষিত ও সাহিত্যসেবীরা কখনো ফিরিয়া তাকায় নাই।’
৩
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের সংস্কৃতি নতুন সংকটের মুখোমুখি হইয়াছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজপুরুষেরা, ধনীরা, শিক্ষিত ও সাহিত্যসেবীরা এখন কি করিতেছেন? তাঁহারা এখন বাংলা ভাষাকে একপাশে সরাইয়া নিজ নিজ গন্তব্যে আগাইয়া যাইতেছেন। শুদ্ধ পুঁথি সাহিত্য নহে, আধুনিক বঙ্গ সাহিত্যও এখন আর তাঁহাদের যোগ্য নাই- ফিরিয়া তাকাইবার উপযুক্ত নাই। তাঁহারা তাঁহাদের পুত্রকন্যাদের পর্যন্ত বাংলা ভাষা হইতে বিমুখ করিয়াছেন। কিন্ডারগার্টেন বা শিশুর বাগান পর্যন্ত এখন প্রায় সম্পূর্ণ বাংলামুক্ত হইয়াছে। এই পরিস্থিতিতে বাঙ্গালি সংস্কৃতি আবার বর্ণের ভাষা (Vernacular) বা শুদ্ধ নিম্নবর্ণের সংস্কৃতি হইয়া উঠিতেছে। হয়ত সেখানেই তাহার শেষ আশ্রয় হইবে। বাংলা ভাষা সংস্কৃতির সংকীর্ণ অর্থ হইতে ছুটিয়া সংস্কৃতির বৃহৎ অর্থে নৃ-তত্ত্বের ময়দানে লুকাইয়া থাকিবে।
১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের ঢাকা অধিবেশনে মূল সভাপতির ভাষণে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলিয়াছিলেন : ‘আমরা পূর্ব বাংলার সরকারকে ধন্যবাদ দেই যে তাঁহারা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করিয়া বাংলা ভাষার দাবীকে আংশিকরূপে স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু সরকারের ও জনসাধারণের এক বিপুল কর্তব্য সম্মুখে রহিয়াছে। পূর্ব বাংলা জনসংখ্যায় গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আরব, পারস্য, তুর্কি প্রভৃতি দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই সোনার বাংলাকে কেবল জনে নয়, ধনে ধান্যে, জ্ঞানে-গুণে, শিল্প-বিজ্ঞানে পৃথিবীর যে কোন সভ্য দেশের সমকক্ষ করিতে হইবে। তাই কেবল কাব্য ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাকে সীমাবদ্ধ রাখিলে চলিবে না। দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব প্রভৃতি জ্ঞানবিজ্ঞানের সকল বিভাগে বাংলাকে উচ্চ আসন নিতে ও দিতে হইবে। তাহার জন্য শিক্ষার মাধ্যম স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাগোড়া বাংলা করিতে হইবে।’
আমি যদি আজ প্রায় ৬৪ বছর পর এই কথারই অবিকল পুনরাবৃত্তি করি তাহা প্রহসনের মতন শুনাইবে। এই ৬৪ বছরে অনেক কিছু বদলাইয়াছে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হইয়াছে। তাহাতে অনেক রক্ত গিয়াছে। বাংলা ভাষা কিন্তু স্বাধীন ভাষা হইতে পারে নাই। ইহাতে কি প্রমাণ হইল? প্রমাণ হইল, রক্ত দিয়া দেশ স্বাধীন করিবার তুলনায় দেশের ভাষাকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো ঢের কঠিন কাজ। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা গিয়াছে। কিন্তু সমাজের ভাষা করা যায় নাই। বাংলাদেশের রাজপুরুষেরা আজ যে সংস্কৃতির আদর করিতেছেন তাহাকে বলিতে চাহেন বলেন ঠিক বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলিতে পারিবেন না।
দোহাই
১. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ‘অভিভাষণ’, পূর্ব্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন, ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৮।
২. আবদুল করিম সাহিত্য-বিশারদ, ‘অভিভাষণ’, পূর্ব পাকিস্তান প্রদর্শনী, চট্টগ্রাম, ২১-২২ জানুয়ারি, ১৯৫০।
সলিমুল্লাহ খান: লেখক, অধ্যাপনা করছেন ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে।