একজন অভিনেত্রীর জন্য ‘ইমেজ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ : রাধিকা আপ্তে
কাজ করছেন তিনি অনেকদিন। তবে ওভাবে চোখে পড়েননি হয়তো। বাংলা, হিন্দি, তেলেগু, মারাঠি, তামিল, মালায়লাম- সব ছবিতেই কাজ করেছেন। মঞ্চেও কাজ করছেন অনেকদিন। এ বছর মার্চে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি ‘হান্টাররর’ দিয়ে নজর কাড়েন রাধিকা।
urgentPhoto
আর সবশেষ সুজয় ঘোষের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘অহল্যা’। ২৯ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর জন্ম ভারতের পুনেতে। রাধিকার ছবির তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে একটু আলাদা কাজ করতে চান তিনি।
রামগোপাল ভার্মার রাজনৈতিক ছবি ‘রক্তচরিত্র’র প্রথম দুই কিস্তিতে দেখা গেছে তাঁকে। ২০০৯ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার পাওয়া বাংলা ‘অন্তহীন’ছবিতেও ছিলেন তিনি। অনুরাগ কাশ্যপের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘পারচ্ছেদ’- এ কাজ করেছেন তিনি। ছবিটির একটি নগ্ন দৃশ্য ইন্টারনেটে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর আলোচিত হন রাধিকা। এ নিয়ে মামলাও করেন অনুরাগ। ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রজেক্টের জন্য বানানো হয়েছিল ছবিটি।
সামনে রাধিকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ‘কৌন কিতনে পানি মে’ এবং ‘মানঝি’ ছবিটি দিয়ে তিনি যে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখবেন সে কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় ছবি দুটির ট্রেইলার দেখে। রাধিকা আপ্তের একটি সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছেভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন চন্দ্রিমা পাল।
প্রশ্ন : গত এক বছরে আপনি অনেক ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাজ করেছেন। আপনি বলে থাকেন, এক ধরনের চরিত্রের অভিনেত্রী কখনোই হতে চান না। এ কারণেই কি আপনার প্রতিটা চরিত্র আলাদা?
রাধিকা : আমি সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিতে পছন্দ করি। ব্যাপারটা এমন না যে একবার কোনো ড্যান্সারের চরিত্রে অভিনয় করলে আমি আর কখনো কোনো ড্যান্সারের চরিত্রে অভিনয় করব না। একজন অভিনেত্রীর কাজ হচ্ছে বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে টাইপকাস্ট করার প্রবণতা তৈরি হয়ে গেছে। কেউ একবার কোনো চরিত্রে ভালো করলে বারবার তাঁকে সে ধরনের চরিত্র করারই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : এটা কি আপনার ক্ষেত্রেও ঘটেছে?
রাধিকা : হ্যা। ‘শোর ইন দ্য সিটি’ ছবিতে আমি শাড়ি পরা এক টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত গৃহিণীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এরপর কয়েকদিন শুধু ওই ধরনের চরিত্রের অফার পেয়েছি। ‘বদলাপুর’ ছবিতে আবেদনময়ী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম, তারপর থেকে শুধু ওই ধরণের চরিত্রেরই অফার পেয়েছি। আফসোস হচ্ছে ‘বদলাপুর’ ছবিতে আমার চরিত্রটি শুধু যৌন আবেদন তৈরি করার জন্য ছিল না, সেটা কেউই বুঝল না। আমি এই ধারণাটাই ভেঙে দিতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি আঞ্চলিক ছবির প্রতিও বেশ সুবিচার করেছেন। বাংলা, মারাঠি, তামিল, তেলেগু এবং মালায়লাম। সেখানেও কি আপনাকে একই ধরনের চরিত্র অফার করা হয়েছে?
রাধিকা : আমাদের দেশে প্রায় সব প্রদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই এই একই ধরনের ঘটনা ঘটে। একজন অভিনেত্রীর জন্য ‘ইমেজ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আপনাকে পর্দায় একটা চরিত্রের মাধ্যমে নিজের ‘ইমেজ’ তৈরি করতে হবে এবং সেটা নিজের ভেতর বয়ে বেড়াতে হবে। অভিনেতারা এই ‘ইমেজ’-এর ব্যাপারে খুব নির্দিষ্ট ছকে হাঁটেন। কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে আপনি কিন্তু মার খেয়ে যাবেন যদি পরপর একই ধরনের চরিত্র করেই যেতে থাকেন। যে মানুষটা সবসময় ভালো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি যদি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন সেটা দর্শকরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। হ্যা, সে কারণে আঞ্চলিক ছবিগুলোতেও টাইপকাস্টের ব্যাপারটা রয়েছে। তারা এটাকে বলে ‘নিজস্ব সংস্কৃতি’। এর পাশাপাশি অনেক প্রথাবিরোধী ছবি হচ্ছে। পরিচালকরা নতুন গল্প নিয়ে কাজ করছেন কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বড় একটা অংশই একই ধরনের কাজ করতে পছন্দ করে, যেসব কাজে সফলতা আসে।
প্রশ্ন : ‘বদলাপুর’ বা ‘অহল্যা’- তে আপনার যে ধরনের আবেদনময়ী চরিত্র করেছেন, বা অনুরাগ কাশ্যপের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘পারছেদ’-এ নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করে কি মনে হয় না যে আপনার এক ধরনের আবেদনময়ী চরিত্র করার প্রবণতা প্রকাশ পেয়েছে?
রাধিকা : আমি ‘রক্তচরিত্র’, ‘শোর ইন দ্য সিটি’, ‘দ্য ডে আফটার এভরি ডে’, ‘মানঝি’, ‘চোখের বালি’, ‘হান্টাররর’-এর মতো ছবিগুলোও কিন্তু করেছি। এসব ছবিতে আমি পাশের বাড়ির মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সব চরিত্রই কিন্তু কাছাকাছি, আমি জানি না কীভাবে এ রকম হয়েছে। মঞ্চে আমি কাজের বুয়ার চরিত্রেও অভিনয় করেছি। মানুষ যেটা দেখতে চায় তারা সেটাই বেছে নেবে।
প্রশ্ন : কিন্তু আপনি যখন দুই ঘণ্টা ধরে ঘরের বউয়ের চরিত্র করেন আবার অন্যদিকে যখন ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ট্রিপ করেন- দর্শকরা কিন্তু ওই ২০ সেকেন্ডের যৌন আবেদনময়ী দৃশ্যটা দেখতেই বেশি আগ্রহী।
রাধিকা : এটা মানুষের স্বভাব। যখন শুটিং শেষ হয়ে যায় অভিনেত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। দর্শকরা কী দেখতে চায়, কীভাবে দেখতে চায় সে ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ ব্যাপারে আমি একমত হই বা দ্বিমত পোষণ করি, তাতে কিছুই আসে যায় না। আমরা অভিনয় করি এবং চাই দর্শকরা যাতে ছবিটা দেখে। পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ আছে, তাদের ৭০০ কোটি রকমের ব্যাখ্যা ও বক্তব্য রয়েছে।
প্রশ্ন : তাহলে ‘পারছেদ’ ছবিতে আপনার নগ্ন দৃশ্য যখন ফাঁস হলো তখন সেটা দর্শক হিসেবে আমার কীভাবে নেওয়া উচিত?
রাধিকা : এ ব্যাপারে আমার অনেক কিছু বলার আছে। আমি এটা নিয়ে কোনো কথা বলিনি, কারণ ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। তাই আমি এখন যাই বলি সেটা কোনো অর্থ বা পার্থক্য সৃষ্টি করবে না। কারণ মানুষ আমার কথা বুঝবে না বা আমাকে বিশ্বাস করবে না, যেহেতু তারা ছবিটি দেখেনি। বিশেষ করে নগ্ন দৃশ্যগুলো যেভাবে ফাঁস হয়েছে। পাবলিসিটির জন্য দৃশ্যগুলো ফাঁস করা হয়নি, এটুকু নিশ্চিত করতে পারি। তাই ছবিটা মুক্তি পাওয়ার পরই আমার এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। কেন ছবিটা করলাম, নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করার সময় আমার কেমন লেগেছে- এসব কিছুই তখন মানুষের কাছে বোধগম্য হবে।
প্রশ্ন : আপনি ‘ইমেজ’ তৈরির কথা বলছিলেন এবং সেটাকে কীভাবে গুছিয়ে করতে হয় সে ব্যাপারেও বলছিলেন। আপনি সেলিব্রেটি ইমেজ ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান যেমন, ‘কাওয়ান’ এবং ‘স্পাইস’-এর সঙ্গে চুক্তি করেছেন। আপনার কি মনে হয়- ইমেজ তৈরির জন্য আপনার পেশাদার প্রতিষ্ঠানের সাহায্য প্রয়োজন?
রাধিকা : আমি এখন যা করছি, সেটা করব এ রকম কখনো ভাবিনি। আমি মনে করি আমার ‘ইমেজ’ হচ্ছে সেটা যেটা আমার ভেতর থেকে তৈরি হয়। ‘কাওয়ান’ এবং ‘স্পাইস’ বহু বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। কাজের ক্ষেত্রে তারা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমারও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমার অবশ্যই অন্যের সাহায্য দরকার। তারা কিন্তু আমাকে সঠিক পরামর্শ দিয়েছে এবং সেরা কাজগুলো পাইয়ে দিয়েছে। আমি বলব তারা খুবই উপকারী।
প্রশ্ন : আপনি একজন ‘সাহসী’ অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত। আপনার মতে ‘সাহস’-এর সংজ্ঞা কী?
রাধিকা : আপনার প্রশ্নটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমার মনে হয় এটা প্রাসঙ্গিক এবং এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন। মানুষ কোনো কিছুর মধ্যে কীভাবে ‘সাহস’ খুঁজে নেবে সেটা নির্ভর করে তারা কোত্থেকে এসেছে তার ওপর। আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে আমি যা করি বা বলি সেটাকে সাহসী বলা হয় না। আর আমি এভাবেই বড় হয়েছি। আমার কাছে মনে হয় ‘সাহস’ মানে কোনো কিছুকে ভয় না পাওয়া।
প্রশ্ন : আপনি কি এমন কিছু করেছেন যেটাকে আপনার নিজের কাছে সাহসী কাজ মনে হয়?
রাধিকা : নাহ, তেমন কিছুই করিনি। আমার ছবিতে যে ধরনের বিষয়গুলো উঠে আসে, অনেকেই বলেন সেগুলো সাহসী। শরীরী আবেদন, কনটেন্ট, আমার চিন্তাভাবনা এগুলোকেই তারা সাহসী বলে। এর কারণ হয়তো আমি কাজের প্রতি সৎ এবং মানুষ কী বলবে সেটা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাই না।
প্রশ্ন : ভারতীয় দর্শকদের কাছে সাহসী মানে সবসময় যৌনতা এবং যৌনতার প্রদর্শনের দিক থেকে সাহসী কোনো কিছুই দর্শকরা বেশিদিন মনে রাখে না।
রাধিকা : যৌনতার প্রদর্শন কখনোই সাহসের সংজ্ঞা হতে পারে না। এটা শব্দের এক ধরনের সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। সাহস অনেক বেশি ইতিবাচক শব্দ। আমার মনে আছে ছোটবেলায় আমি ‘বোল্ড অ্যান্ড দ্য বিউটিফুল’ নামে একটি সিরিয়াল দেখেছিলাম এবং সেটা দেখে প্রচণ্ড হেসেছিলাম।
প্রশ্ন : আপনার এজেন্সিগুলো কীভাবে আপনাকে কাজ পাইয়ে দেয়?
রাধিকা : সেটা তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন। তবে তারা বলে যে, আমি আলাদা।
প্রশ্ন : কীভাবে আলাদা?
রাধিকা : আমাকে যেটা আলাদা করেছে সেটা মনে হয় আমার পরিবেশ। মানে আমি যেখানে বড় হয়েছি। আমি একটা আলাদা পরিবেশ থেকে এসেছি, যেখানে কেউ ফিল্মের সাথে জড়িত না। আমার মা, দাদি এবং আমার স্বামী এরা সবাই অনেক বেশি উদার মানুষ। তারা সবাই নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাসী। এর বাইরে আমি ভারত এবং ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি এবং আমি আমার সব সিদ্ধান্ত ও কাজের দায়িত্ব মাথা পেতে নেই। এমনকি আমার ফ্লপ ছবিগুলোও।
প্রশ্ন : যেমন? দুই-একটা উদাহরণ যদি দিতেন।
রাধিকা : আমি সৎ বলে আপনাকে চামড়া খুলে শরীরের হাড় দেখাব ভাবছেন? সেটা কখনোই করব না!
প্রশ্ন : যুক্তরাজ্যে নাচ শেখা এবং বিয়ের জন্য আপনি প্রায় এক বছরের লম্বা একটা বিরতি নিয়েছিলেন। আপনার স্বামী বেনেডিক্ট টেইলর ‘শিপ অব থিসেস’ এবং ‘কিল্লা’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। অভিনেত্রীরা যেখানে তাদের সম্পর্কের কথাই স্বীকার করতে চান না আপনি সেখানে রীতিমতো বিয়ে করে ফেললেন! তখন কেউ মানা করেনি আপনাকে?
রাধিকা : অনেকেই মানা করেছিল। ইমেজের বিষয়টা দিয়ে আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। সিঙ্গেল এবং ‘প্রেম করার জন্য ফাঁকা’- অভিনেত্রীদের তৈরি এই ইমেজটা আমি বেশিদিন বয়ে বেড়াতে চাইনি। আমি একজন অভিনেত্রী এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনের ওপর অধিকার সম্পূর্ণ আমার। মানুষ যদি মনে করে শুধু অভিনেত্রী হিসেবে ইমেজ রক্ষার জন্য আমি বিয়ে করব না- এটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমরা বিয়ের আগে লিভ টুগেদার করেছি এবং আমাদের মনে হয়েছে আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। এ জন্য আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই বিয়ে করি, এর জন্য অন্য কারো পরামর্শের প্রয়োজন অনুভব করিনি।
প্রশ্ন : আপনার বাবা, চারুদত্ত আপ্তে একজন নামকরা নিউরোসার্জন। আপনি পুনের ফার্গুসন কলেজে গণিত এবং অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। কী মনে করে অভিনয়ে চলে এলেন?
রাধিকা : আমি অঙ্ক প্রচণ্ড ভালোবাসি এবং হয়তো কোনোদিন আবার অঙ্ক পড়াবো কোথাও। আমার দাদি মধুমালতি আপ্তে একজন গণিতবিদ ছিলেন এবং তিনি ভারতে লেখাপড়া শেষ করে পিএইচডি করতে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। তিনি অঙ্কের শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি অনেক রাত জাগতেন এবং ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অঙ্ক করতেন। আমি তাঁকে দেখেছি কাগজ-কলম নিয়ে জটিল সব অঙ্কের সমাধান করছেন। কখনো কাগজ ছুড়ে ফেলছেন বা কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে নতুন কলম নিয়ে আবার অঙ্ক কষছেন। আমিও দাদির সঙ্গে রাত জাগতাম এবং অঙ্কের মৌলিক বিষয়গুলো তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি। পরে অবশ্য আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে একসঙ্গে অনেক কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর তাই গ্র্যাজুয়েশেন শেষ করার পর আমাকে বেশ কয়েকটি অপশনের মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে হয়েছিল। তখন আমার মনে হয়েছিল অভিনয় করাটাই আমার জন্য ভালো হবে। আমি তখন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে একসময় আমি আবার অঙ্কের কাছেই ফিরে আসব এবং আমি এখনো আশা করি যে আমি সেটা পারব। আমি ‘আসাক্তা’ নামের একটা থিয়েটার গ্রুপের সঙ্গে প্রথম কাজ করা শুরু করেছিলাম। তখন থেকে এখনো থিয়েটারে কাজ করছি, ১৪ বছর হয়ে গেল।
প্রশ্ন : থিয়েটার কি আপনার অভিনয় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করেছে? ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ভয়টা দূর করে দিতে পেরেছে?
রাধিকা : মানুষ মঞ্চে কাজ করে শুধু মঞ্চের জন্যই। এর সঙ্গে আর কিছু জড়িত নয়। থিয়েটার তাদের নেশা এবং কাজের ব্যাপারে তারা সিরিয়াস। থিয়েটারে কোনো পয়সা নেই, এখান থেকে আপনি সহজে তারকাখ্যাতি পাবেন না কিন্তু এটা আপনাকে মাটিতে পা রেখে চলা শেখাবে, বিনয়ী করবে। কখনো আপনাকে মাত্র সাতজন দর্শকের সামনে পারফর্ম করতে হতে পারে। সেটাও নিজের সব উদ্যম, শক্তি ও প্রচেষ্টা দিয়ে করতে হবে। থিয়েটার আপনার মধ্যে দায়িত্ববোধটা তৈরি করে দেবে। থিয়েটারের প্রতি আমার কমিটমেন্ট অন্য যেকোনো কিছুর ঊর্ধ্বে। এমনকি বড় কোনো চলচ্চিত্রেরও ওপরে। কারণ আমি যদি একটা শো মিস করি, তাহলে এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার ক্ষতি হবে এবং থিয়েটার নিয়ে তাদের যে ভালোবাসা এবং একাগ্রতা সেখানে আঘাত লাগবে।