নিবন্ধ
ফাগুনে একুশ
যদি এরকম করে ভাবি, যখন ফাগুনের দুই তারিখ থেকে চৌদ্দ, ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ধরা পড়ে প্রহসন বিচারের রায়ে দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হয়ে ফাঁসির মঞ্চে ভগৎ সিং সুখদেব শিবরামরা অপেক্ষা করে আছেন। দেশের জন্য। বাঙালির জন্য। জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য বিসর্জন দেবেন তাদের অনন্য প্রাণ; তখন আমরা ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করি। নেই নানা উদ্যোগ। ঘরে ঘরে নানা আয়োজনের রান্না। রং বেরং-এর কাপড় পড়ে বসন্ত উদযাপন করি। বেড়াতে যাই। হাসি গল্প আর মত্ততায় পার করে দেই সারাদিন। আমরা বাঙালি। কেউ কি ঐদিন ভাবি এই সব বীরদের কথা। আজ আমার বাঙলার জন্য তাদের উৎসর্গ এতটুকু শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি?আর আটই ফাগুন! আন্তজার্তিক মাতৃভাষা হবার সুবাদে, রেডিও টিভি সেটেলাইটের প্রচারণার কারণে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণ করি বৈকি। কিন্তু ক'জন জানি বাংলা ফাগুন মাসের কত তারিখ ছিল সেটা। প্রশ্ন রেখেই আজকের লেখাটা শুরু করছি, এজন্য যে নিজের দেশের নিজের ভাষার ইতিহাসটা খুব ভালো করে জানা, শুধু জানাই নয় আত্মস্থ করাটা আজকের প্রজন্মের জন্য খুবই জরুরি।
যতই আমরা আধুনিকতার লেবাসটা গায়ে পরে নেই আর ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে সমাজে চলিফিরি নিজের দেশের আর ভাষার প্রতি ভালোবাসাটা অসামান্য না হলে বুঝি সবই জলে যায়। দেশকে ভালোবাসা আর মা মাটির প্রতি শ্রদ্ধাবোধই আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় আধুনিকতা। আমি আধুনিক হতে চাই। চাই আমার সন্তান আমার পরবর্তী প্রজন্ম এমনই আধুনিক হয়ে বেড়ে উঠুক।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ১৩৫৮ সাল ৮ই ফাগুন ঘটেছিল এই রক্তাক্ত ঘটনা। ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা হলো ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া। জন্ম থেকে যে ভাষা বলে আসছি মা বাবার মুখে যে ভাষা শুনছি তাই তো মাতৃভাষা অর্থাৎ মায়ের ভাষা। এও কি ছিনিয়ে নেবার? এও কি প্রাণ দিয়ে নতুন করে অর্জন করবার? হ্যাঁ। কেন নয়।
বিবেক যখন অন্ধ। ক্রুদ্ধ আস্ফালনই যখন ক্ষমতাবানের অহংকার তখন আমার মায়ের মুখের ভাষা আমার দাদার মুখের ভাষাটাও আমাদের প্রাণ দিয়েই অর্জন করতে হয়েছিল। বাঙলাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল। ভাষার এই লড়াই শুধু বাঙালির কেন হবে সমগ্রবিশ্বের জন্যও এক অনন্য ইতিহাস এক অনন্য অর্জন এক অসাধারণ অতীত। আমি বাঙালি তাই দারুণ গর্ব হয় আমার। আমি গরিব। তৃতীয় বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র আর উন্নয়নশীল দেশ আমার। তবু গর্ব আমার। আমার ইতিহাস পৃথিবীর একমাত্র ইতিহাস। প্রাণ দেওয়ায় সমৃদ্ধ। সফলতায় সমৃদ্ধ। আর কেউ পায়নি এমন। আর কেউ শোনেনি দেখেনি এমন অলংকার এমনই অহংকার আছে আমার।
৮ ফাগুন যে ঘটনা ঘটেছিল তারও আগে আছে এক দীর্ঘ আন্দোলনগাথা। এটি ছিল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের ঘটে যাওয়া একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন। পরবর্তীকালে যা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত যখন ভাগ হয়ে যায়। সেটা ১৯৪৭ সাল। তারই ফলস্বরূপ তৈরি হয় একটি নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। পাকিস্তানের দুটি অংশ যাদের মাঝখানে দেড় হাজার মাইলের ব্যাবধান। একটি পশ্চিম পাকিস্তান যেটি বর্তমানে পাকিস্তান আর একটি পূর্ব পাকিস্তান যেটি বর্তমান বাংলাদেশ। দুটি দেশের মৌল পার্থক্য তো রয়েইছে আর সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি রয়ে গেল ভাষায়। পশ্চিম পাকিস্তান জন্মগতভাবে উর্দুভাষী। আর পূর্ব পাকিস্তান বাঙলাভাষী। যে কারণে অফিস আদালত স্কুল কলেজ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কাজগুলোতে নানা সমস্যা শুরু হতে লাগলো। তাতে সাধারণত যা হয়। বিবেকবুদ্ধিহীন ক্ষমতাবান— চালিয়ে দিতে চায় স্বইচ্ছেটাকে অন্যের ঘাড়ে। ভাবে ক্ষমতা যখন আমার হাতে দুর্বল অর্থাৎ ক্ষমতাহীন তখন মানতে বাধ্য যে কোন অনাচার।
পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের স্কুলের বিষয়সমূহের অনুমোদিত তালিকা থেকে বাদ দেয়। মুদ্রা ও ডাকটিকিট থেকেও বাঙলা অক্ষর বিলুপ্ত করে। কিন্তু এই ঘোষণা এই তৎপরতা কেন মেনে নেবে বাঙালি। শুধুমাত্র শাসন করবার সুবাদে তারা আমার মায়ের ভাষা কেড়ে নেবে? মেনে নেবে না। নেতৃস্থানীয় পণ্ডিতগণও উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করবার বিপক্ষে মত দেন। তার যুক্তিযুক্ত কারণও তারা উপস্থাপন করেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, "আমাদের যদি একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা ঊর্দুর কথা বিবেচনা করতে পারি।" সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ বলেন, "উর্দুকে যদি রাষ্ট্রভাষা করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ 'নিরক্ষর' এবং সকল সরকারি পদের ক্ষেত্রেই তারা 'অনুপযুক্ত' হয়ে পড়বে।'' মেনে নিতে পারেনি সাধারণ বাঙালি। তাই দানা বাঁধতে থাকে ক্ষোভ। ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা করবার সমর্থনে প্রথম 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করা হয়। তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভুঁইয়া এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। পরে সংসদ সদস্য সামসুল হক আহ্বায়ক হয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে কার্যক্রম আরও জোরদার করেন।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাঙলায় বক্তৃতা প্রদান আর সরকারি কাজে বাঙলা ভাষা ব্যবহারের জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনেন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। সংসদ সদস্য প্রেমহরি বর্মন, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তাদের সমর্থন ছিল আসলে পূর্ব পাকিস্তানের সব সাধারণ মানুষের মনেরই কথা। খাজা নাজিমুদ্দিন এ প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দেন। তাকে সমর্থন করেন পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান।
অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি বাতিল হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারত ভাগের পর প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন। রেসকোর্স ময়দানে ২১ মার্চ ঘোষণা দেন Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan -উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।একইভাবে ২৪ মার্চ কলাভবনে গিয়েও একই ঘোষণা দেন। একই বছর ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলার মাঠে ছাত্রসভায় যোগ দেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। তখন তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হলে তিনি নীরব থাকেন। আবুল কাশেম, আজিজ আহমদ, তাজউদ্দিন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আব্দুল মান্নান সবাই মিলে একটি স্মারকলিপিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। তার নীরবতা ছাড়া আর কোন কিছু পাওয়া যায় না।
এর কিছু পরই পূর্ব বাঙলা সরকারের পক্ষ হতে ভাষার সমস্যা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বিশদ ব্যাখা চাওয়া হলে, মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাঙলা ভাষা কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হলেও ১৯৫৮ সালের আগে তা প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তখনকার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আবার ঢাকার পল্টন ময়দানে ঘোষণা দেন "উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। একই জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে না।" তার ভাষণটি ছিল জিন্নাহর কথারই অনুসুর। তাই এর প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা আর ৩০ জানুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয় ঢাকায়। পরে ছাত্র সমাবেশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আম্রকাননে সমবেত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা আর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী হরতাল পালন করা হবে। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না এমন মতদ্বৈধতা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঙলা ভাষার সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে পূর্ণাঙ্গ আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
ভঙ্গ হয় ১৪৪ ধারা। দমন। লাঠিচার্জ। কাঁদানে গ্যাসচার্য। গুলি। মৃত্যু। ৮ই ফাল্গুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য ছাত্র শিক্ষক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। এখানে তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন আর উপাচার্যও উপস্থিত ছিলেন। বেলা এগারটায় সমাবেশটি রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ ঘিরে ফেলে। কাঁদানে গ্যাসচার্য করে হুঁশিয়ার করে। কিছু ছাত্র তখন দৌড়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে চলে যায়। বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাকি ছাত্ররা মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের সামনে এলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে গুলি বর্ষণ শুরু করে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন কলাভবনেও পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।
কলাভবন প্রাঙ্গণেই নিহত হন আব্দুল জব্বার, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সালাম, আবুল বরকত। ছাত্র হত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জনগণ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত এলাকার অফিস দোকানপাট ও পরিবহন। ছাত্রদের আন্দোলন রূপান্তরিত হয় জনমানুষের আন্দোলনে। রেডিওর শিল্পীরাও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অনুষ্ঠান করা বন্ধ রাখেন। তখন গণপরিষদে চলছিল অধিবেশন শুরুর পাঁয়তারা। পুলিশের গুলির খবর শুনে মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ ও আরো কিছু বিরোধী দলিয়ও অধিবেশন বাদ দিয়ে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে জানাজা শেষে মিছিল বের হয়। সারা দেশ মিছিল আর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। ছাত্র জনতা অফিসের কর্মকর্তা, সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী, কলেজ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই রাস্তায় নেমে আসে আর মিছিলে যোগ দেয়।
বিক্ষুব্ধ মানুষ পুড়িয়ে দেয় সরকার পক্ষিয় দুটো পত্রিকা অফিস জুবিলী প্রেস আর মর্নিং নিউজ। নবাবপুর রোডেও জানাজার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি মামলা দায়ের করতে চাইলে যথেষ্ট কাগজপত্র নেই অজুহাতে মামলাটি সরকার গ্রহণ করে না। রফিক উদ্দিনের পরিবারও একই কারণে মামলা দায়ের থেকে বঞ্চিত হয়। এরই মাঝে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আবুল বরকতের পরিবার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২৪ তারিখ শেষ হয়। মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু আর ৬ ফুট চওড়া। তাতে 'শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ' একটি হাতে লেখা কাগজে গেঁথে দেয়া হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ফেব্রুয়ারি নিহত শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি সেটি উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। ঐ দিনই পুলিশ তা ভেঙে দেয়। আরও অনেক দ্বন্দ্ব মতদ্বৈধতার ভেতর দিয়ে পাকিস্তান সরকার ভয় পেয়ে ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনে। সংবিধানের ২১৪ (১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয় Urdu and Bangla Shall be the state language of Pakistan.উর্দু এবং বাঙলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।শেষ হয় পাকিস্তান সরকারের সরকারি ভাষার বিতর্ক। পৃথিবীর ইতিহাসে আরও একটি অধ্যায় যুক্ত করে বাংলাভাষী। ভাষার যুদ্ধে প্রথম এবং সার্থক হিসেবে।এবং পরে বাংলাদেশে সরকারের লিখিত প্রস্তাবকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।এই আমাদের ভাষার ইতিহাস। অপহৃত ভাষাকে শত্রুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনবার ইতিহাস।
জনৈক একদিন এক ব্রিটিশকে প্রশ্ন করেছিল
- কবে তোমরা আমাদের বাংলা ছেড়ে যাবে বল তো?
- যেদিন তোমরা লুঙ্গি ছেড়ে আমাদের শার্ট প্যান্টালুনটা ভালো করে পরতে শিখবে সেদিন।
এই ছিল ব্রিটিশের উত্তর। এক্ষেত্রে ওরা বেশ খানিকটাই সফল বলতে চাই এক হিসেবে। আবার হুমায়ুন আজাদ স্যারের কথা মনে পড়ে যায়। ক্লাসে প্রায়ই তিনি বাংলা ভাষা সাহিত্য বিদেশী ভাষা সংস্কৃতি এসব নিয়ে কথা বলতেন। সেটা ১৯৯৫/৯৬ সাল। স্যাটেলাইট চ্যানেলের কারণে আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করছে অপসংস্কৃতি এসব নিয়ে আলাপচারিতা চলছিল খু্ব তখন এখানে সেখানে। তখন একদিন ফনেটিক্সের ক্লাসে স্যার বলছিলেন—প্রয়োজনে অন্য ভাষার কিংবা অন্য সংস্কৃতির কোন বিষয় গ্রহণ করে নিজ দেশ কিংবা ভাষার সাথে মোল্ড করেই সমৃদ্ধির পথে এগুতে হবে। নইলে পেছনে পড়ে থাকতে হবে।অপ বলে কোনো কথা নেই। অন্য সংস্কৃতির যেটুকু তোমার নিজের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে অবমূল্যায়ন না করেই গ্রহণ করা যায় ততটুকু গ্রহণ করাটাও জরুরী।
তাই বলি, ব্রিটিশের পোশাক আত্মস্ত করেছি আমরা প্রয়োজনে।কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে যদি নিজের দেশ ভাষা আর স্বজাতির এত এত সংবেদনশীল বিষয়গুলো যার সাথে আমার নিত্য দিনযাপন জড়িত, যার সাথে আমার ঘুম আর স্বপ্ন দেখা জড়িত, যার সাথে আমার মা আর সন্তান জড়িত তাকে যদি অবহেলায় পিছে ফেলে রাখি তবে কি করে আসবে সমগ্র জাতির শুভসময়? আজ ১৪২৪ সালের ৮ ফাগুনের এই দিনে দাঁড়িয়ে আসুন একটু ভাবি এই সব আত্মীয় আর রক্তীয় অনন্য সব গাথা কাহিনী। যা আমার নিজের। অন্য ভাষা কিংবা সংস্কৃতির ধার করা নয়। একান্ত আপন। বাঙালির একান্ত ব্যক্তিগত। ভাষা শহীদরাই হোক না ফাগুনে আমাদের সবচেয়ে বড় ভ্যালেন্টাইন।