ফারেনহাইট ৯/১১
যে তাপমাত্রায় স্বাধীনতা পুড়ে যায়
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা যে শুধু বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছিল, তা নয়। শিল্প-সংস্কৃতি এবং সাহিত্যেও গুরুতর প্রভাব ফেলেছিল এই হামলা এবং হামলা-পরবর্তী বুশ প্রশাসনের পাল্টা আগ্রাসন।
যুক্তরাষ্ট্রে ও এর বাইরেও ৯/১১-এর প্রেক্ষাপট বা প্রতিক্রিয়া নিয়ে চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে। যেখানে নির্মাতারা সন্ত্রাসবাদের ফলে সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগ, সেটি ফুটিয়ে তুলেছেন। সে সঙ্গে সমালোচনা করেছেন বুশ সরকারের আগ্রাসী নীতিকে।
মার্কিন পরিচালক মাইকেল মুর তেমনই একজন আলোচিত পরিচালক। ৯/১১ নিয়ে ২০০৪ সালে তিনি তৈরি করেন ‘ফারেনহাইট ৯/১১’ তথ্যচিত্রটি।
জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ এবং এর ঘটনাপ্রবাহের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে। তুলে ধরা হয়েছে সাধারণ মানুষের মতামত। এমনকি সরাসরি ইরাক যুদ্ধের ময়দানেও চলে গিয়েছিলেন মুর। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে মুর খুব স্পষ্টভাবেই বুশ প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। বুশের মন্তব্য এবং বক্তব্যও সেখানে ঠাঁই পেয়েছে।
প্রশাসনের পাশাপাশি ৯/১১-পরবর্তী সময়ে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেছেন মুর।
১২২ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রে মার্কিন করপোরেট মিডিয়া হাউসগুলোকে ইরাক যুদ্ধের ‘চিয়ার্সলিডার’ আখ্যা দিয়েছেন মুর।
২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন ছিল ভুল তথ্যের ভিত্তিতে। এবং কোনো যথাযথ প্রমাণ বা দূরদর্শী বিশ্লেষণ ছাড়াই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বুশ প্রশাসন। ইরাক যুদ্ধের বৈধতা এবং বুশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়েই এই তথ্যচিত্রে প্রশ্ন তুলেছেন মাইকেল মুর। যদিও এ কারণে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে। বিভিন্ন সময়ে মামলা-মোকদ্দমার খপ্পরে পড়েছেন এই তথ্যচিত্রের কারণে।
তবে দর্শক-সমালোচকদের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং প্রশংসা পেয়েছে ‘ফারেনহাইট ৯/১১’। ২০০৪ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম দেখানো হয় তথ্যচিত্রটি। প্রদর্শনী শেষে ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে সবাই সম্মান জানায় ছবিটিকে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সংবর্ধনা কোনো ছবির জন্য। ওই উৎসবে কানের সেরা পুরস্কার স্বর্ণপত্র (পাম ডি ওর) জিতে নেয় ‘ফারেনাইট ৯/১১’।
১৯৫৩ সালে রে ব্র্যাডবুরির লেখা উপন্যাস ‘ফারেনহাইট ৪৫১’ থেকে তথ্যচিত্রটির নামকরণ করা হয়। তথ্যচিত্রটির ট্যাগলাইন ছিল, যে তাপমাত্রায় স্বাধীনতা পুড়ে যায় (দ্য টেম্পারেচার অ্যাট হুইচ ফ্রিডম বার্নস)।