মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বই : তানভীর মোকাম্মেলের ভূমিকা
[নিচের লেখাটি ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের নতুন বই ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎস সন্ধান ও বিবর্তনের ধারা’র ভূমিকা হিসেবে লিখেছেন বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য ভূমিকাটি গ্রন্থলেখকের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করা হলো। বইটি এ বছর প্রকাশ করেছে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ ও এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু।–ফিচার সম্পাদক]
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন নানা বিষয়ে গবেষণা ও লেখালিখি করে থাকেন। তবে চলচ্চিত্র যে ওঁর বিশেষ আগ্রহ ও ভালোবাসার বিষয়, তা ওঁর একাধিক গ্রন্থেই প্রকাশিত। ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎস সন্ধান ও বিবর্তনের ধারা’ নামের এই বইটিতে জাহাঙ্গীর হোসেন অনেক গভীরে ও বিশদে গিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উৎস, অবকাঠামো, চলচ্চিত্র শিক্ষা, সরকারি নীতিমালা—এসব প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। উৎস সন্ধানে যে তিনি কত আন্তরিক তা বোঝা যায়, বাংলায় তথা এই উপমহাদেশে চলচ্চিত্রযাত্রা যাঁর হাতে শুরু, সেই হীরালাল সেনকে নিয়ে বইয়ের শুরুতেই তিনি লিখে ফেলেন তথ্যবহুল এক প্রবন্ধ।
বইটিতে জাহাঙ্গীর হোসেন একটা শিল্পমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে বেশ কিছু মননশীল লেখা লিখেছেন। লিখেছেন অত্যন্ত যুগোপযোগী একটা বিষয় আমাদের প্রেক্ষাগৃহসমূহকে ডিজিটালে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষিত, আবার একই সঙ্গে লেখেন এ দেশে আধুনিক ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণের পুরোধাপুরুষ আলমগীর কবিরকে নিয়েও চিন্তাসমৃদ্ধ একটি নিবন্ধ। লিখেছেন বিশেষ জরুরি জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা এবং আমাদের মতো দেশের জন্য যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই চলচ্চিত্র সেন্সরের পথ ও পদ্ধতি নিয়েও অনুসন্ধিৎসু একটি লেখা।
‘স্বভাব কবি’ হওয়া যায়, কিন্তু ‘স্বভাব চলচ্চিত্রকার’ হওয়া যায় না। কারণ চলচ্চিত্র একটা প্রযুক্তিগত মাধ্যম। সেই প্রযুক্তিটা তো শিখতে হবে। এই জন্য চলচ্চিত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জাহাঙ্গীর হোসেন এ দেশে সুস্থধারার চলচ্চিত্রের বিকাশে শিক্ষার গুরুত্বটা বোঝেন এবং তাই বইটিতে চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিক্ষার বিকাশ নিয়েও লিখেছেন একটি বিশদ লেখা। বাংলাদেশে কিছু ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির মান বেশ দুর্বল। আর এ দেশে রুচিশীল ও ব্যাপক একটা চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাইলে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এ ধরনের একাডেমিক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অসীম।
জাহাঙ্গীর হোসেনের এ বইটি এ দেশে একটা সুস্থধারার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে তুলতে অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইটির ব্যাপক প্রচার প্রত্যাশা করি।