বিশ্বসেরা ১০০ বই
উইলিয়াম ফকনারের ‘আবসালোম, আবসালোম!’
মার্কিন লেখক উইলিয়াম ফকনারের বিখ্যাত উপন্যাস ‘আবসালোম, আবসালোম!’ ১৯৩৬ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের আগে ও পরের প্রেক্ষাপটে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। উপন্যাসটিতে মূলত দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি পরিবারের গল্প বলা হয়েছে। কাহিনীর মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল থমাস সুটপেনের জীবন।
ফকনার নিজেও ছিলেন দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসী। তাই তাঁর এই উপন্যাসে দক্ষিণ আমেরিকান এবং তাঁর নিজস্ব নীতি নৈতিকতার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
কাহিনী সংক্ষেপ
‘আবসালোম, আবসালোম!’ উপন্যাসটি মূলত থমাস সুটপেনের জীবনী। এর বর্ণনা আমরা পাই কুয়েন্টিন কম্পসনসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেকের বয়ানে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সুটপেনের রুমমেট ছিলেন কম্পসনের দাদা। তাঁর কাছ থেকে শোনা থমাস সুটপেনের জীবনী কম্পসন বলেছিলেন রোজাকে। এই রকম অনেকজনের বয়ানে বিভিন্ন সময়ে থমাসের জীবনী উঠে এসেছে।
থমাস পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মিসিসিপিতে চলে আসেন সম্পদ অর্জনের জন্য এবং একসময় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন থমাস।
মিসিসিপির জেফারসনে কয়েকজন ক্রীতদাস ও একজন ফরাসি স্থপতিকে নিয়ে পৌঁছান থমাস সুটপেন। স্থানীয় একজন আদিবাসীর কাছ থেকে ১০০ বর্গমাইল জমি কিনে নেন থমাস। সেই জমিতেই বাড়ি কিনে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।
দিনে দিনে উন্নতি হতে থাকে থমাসের। নিজের সম্পদ দেখভালের জন্য থমাসের প্রয়োজন ছিল সন্তান। স্থানীয় এক বণিকের মেয়ে অ্যালেন কোল্ডফিল্ডকে বিয়ে করেন তিনি।
ফকনারের লেখার ধরনের কারণে উপন্যাসটি জমে ওঠে। বিভিন্নজনের বয়ানে থমাসের জীবনী তিনি যেভাবে বর্ণনা এসেছে, সেভাবেই আবার অনেক কিছুই থেকে যায় না বলা। আর এর মধ্যে থেকেই পাঠকের সামনে থমাসের বর্ণময় জীবন ফুটে উঠতে থাকে।
ফকনারের ভাষ্যমতে, উপন্যাসটির প্রথম অধ্যায়টিই এর মূল উপজীব্য। এর ওপরেই পুরো উপন্যাসের ঘটনাবলি দাঁড়িয়েছে এবং তিনি এর মাধ্যমেই উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
ফকনার মূলত অতীতের কাহিনী থেকে একজন মানুষকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এর পরেও অন্যান্য উপন্যাসে এভাবেই লিখেছেন ফকনার। অতীতে একজন মানুষের কাজ ও জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলি থেকে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন ফকনার।
লেখক পরিচিতি
১৮৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম ফকনারের। তিনি বড় হয়েছেন মিসিসিপির অক্সফোর্ডে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কানাডিয়ান এবং পরে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন উইলিয়াম ফকনার।
যুদ্ধ শুরুর আগে ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপিতে লেখাপড়া করেন তিনি। তখন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। কাজ করেন প্রকাশনা সংস্থা ও পত্রিকায়।
বিভিন্নজনের বয়ানে অতীত থেকে গল্প তুলে আনার বিষয়ে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন ফকনার। এটাই তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য। উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা ও চিত্রনাট্য- লেখালেখির প্রায় সব শাখাতেই কাজ করেছেন তিনি। তাঁর লেখার মধ্যে মিসিসিপি তথা দক্ষিণ আমেরিকার মানুষের জীবন এবং দর্শন উঠে এসেছে প্রায়ই।
১৯১৯ সালের দিকে উইলিয়াম ফকনারের লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯২০ এবং ৩০ এর দশকে তাঁর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ও ছোটগল্প ছাপা হয়।
১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান উইলিয়াম ফকনার। মিসিসিপিতে জন্ম নেওয়া তিনিই একমাত্র নোবেল বিজয়ী।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে আ ফ্যাবল (১৯৫৪), দ্য রিভিয়ার্স (১৯৬২), দ্য সাউন্ড অ্যান্ড দ্য ফিউরি (১৯২৯), অ্যাজ আই লে ডায়িং (১৯৩০), লাইট ইন আগস্ট (১৯৩২), আবসালোম, আবসালোম! (১৯৩৬)।
১৯৬২ সালের ৬ জুলাই মারা যান উইলিয়াম ফকনার।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এই তালিকাটি তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ জন লেখকের কাছে তাদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।