ইতিহাসের ফ্রেমে তাজউদ্দীন আহমদ
ফ্রেমে ফ্রেমে ইতিহাস বন্দি, ফ্রেমের প্রতিটি ছবিই যেন কথা বলছে ইতিহাসের। আর এই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম এই মহান নেতার ৯১তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। সেই উপলক্ষে ধানমণ্ডির গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
একটি ফ্রেমে একাত্তরের ডিসেম্বরে ভারতের সংবাদমাধ্যম আকাশবাণীর এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন তাজউদ্দীন আহমদের। একাত্তরের নভেম্বরের এক ছবিতে দেখা যায়, ভারতের কৃষ্ণনগরের মিলিটারি ফিল্ড হাসপাতালে তিনি। একাত্তরের রণাঙ্গনে আহত ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিচ্ছেন। আলোকচিত্রগুলোতে উঠে এসেছে মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের নানা দুর্লভ মুহূর্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যুদ্ধের আগে ও পরের অনেক ছবি। এ ছাড়া পারিবারিকসহ বিভিন্ন রকমের ছবি। ইতিহাসের এমন স্মৃতিময় ২৩২টি আলোকচিত্র রয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
গতকাল শনিবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও ড. কামাল হোসেন।
তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ আদর্শবাদী নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাবাদর্শ ও চিন্তা-চেতনাকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তিনি। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস তিনি জাতিকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে।’
স্মৃতিচারণ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একাত্তরের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তাজউদ্দীন আহমদ। সেই ক্যাম্পে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমাদের সঙ্গে দুপুরের আহারও করেন।’ তিনি যোগ করেন, বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহচর হিসেবে তাঁর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনতে অগ্রপথিক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ একে অপরের পরিপূরক ছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের অসহযোগ আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, এর পরে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা সব ক্ষেত্রেই তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে রশিদ তালুকদার, আফতাব আহমেদ, মঞ্জুরুল আলম বেগ, গোলাম মাওলা, জহিরুল হক, পাভেল রহমানসহ দেশ-বিদেশের আলোকচিত্রীদের ফ্রেমবন্দি অনবদ্য সব ছবি। এ ছাড়া পারিবারিক অ্যালবাম ও তৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত সংগৃহীত ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীতে।
ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডের গ্যালারি টোয়েন্টিওয়ানে মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।