অমাবশ্যায় আম্পানের আঘাত, সাতক্ষীরার চিন্তা বাঁধ নিয়ে

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে ভাটার সময়েও পানি কমেনি। নদীর পানি ভাটায় কমই টানতে দেখা গেছে। নদীগুলো হয়ে উঠেছে ক্ষীপ্র রাক্ষুসী। এর ফলে জেলার উপকূলের মানুষ আতঙ্কের আছে।
এদিকে আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরায় দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে দুপুরে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় জোরালো দমকা হাওয়া বইছিল এবং নদ-নদীর পানি আছড়ে পড়ছিল বেড়িবাঁধের ওপর। আজ দিনভর সুর্যের মুখ দেখা যায়নি। উপকূলের মানুষ সন্ধ্যায় ভরা অমবস্যার মধ্যে আম্পানের সম্ভাব্য আঘাতের সময় জোয়ার উঠলে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কা করছে।
শ্যামনগর ও আশাশুনির বিভিন্ন ইউনিয়নের বিশেষ করে গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা ইউনিয়নে ৪৫টিরও বেশি বেড়িবাঁধ পয়েন্ট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে গাবুরার নেবুবুনিয়া, নিজামিয়া মাদ্রাসার সামনে ও পদ্মপুকুরের চাউলখোলা, খুটিকাটা, কামালকাটি ও চণ্ডীপুরে কপোতাক্ষ এবং খোলপেটুয়া নদীর পানি বেড়িবাঁধ উপচে পড়তে শুরু করেছে।
পদ্মপুকুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, এসব স্থানে তাঁরা বালির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল জানান, তাঁর এলাকার দাতিনাখালি, ভামিয়া ও দুর্গাবাটির তিনটি পয়েন্টে খোলপেটুয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী হয়ে উঠেছে উত্তাল। এসব নদী এখন ক্ষীপ্র রাক্ষুসীর রূপ নিয়েছে। সেইসঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে এ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে মানুষ।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঝুঁকির মধ্যে থাকা দুই লাখ ৮৯ হাজার মানুষকে এক হাজার ৮৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৯ হাজার গবাদি পশুকেও জীবন রক্ষার জন্য এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূর্গত মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী মায়েদের সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সব নদীতেই পানি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের হিজলিয়া, হরিশখালি, চাকলা, কুড়িকাহনিয়া, শ্রীপুর এবং কোলায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের মুখে। সেখানে গ্রামবাসী বাঁধ ঠেকানোর কাজ করছেন। একই উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছোট এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা ও হাজরাখালিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসী।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানান, তাঁর এলাকায় খোলপেটুয়া এবং কপোতাক্ষ নদীর পানি ওভার ফ্লো হয়েছে। সেখানে বাঁধ ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সুন্দরবনের সীমান্ত নদী কালিন্দী এবং মাদার নদীর পানি ফুলেফেঁপে বনে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে উপকূলীয় এলাকার শত শত চিংড়ি ঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঘেরের ছোট ছোট রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে চিংড়ি চাষিরা জানিয়েছেন।