আইনের অজুহাত বাদ দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন : ডা. জাফরুল্লাহ
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকালে অনুষ্ঠেয় আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচি বাতিল করে সে অর্থে কুরবানির ঈদে দরিদ্র পরিবারকে ঈদ খরচের জন্য বরাদ্দ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পাশাপাশি আইনের অজুহাত না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলনায়তনে কুরবানির ঈদে দরিদ্র পরিবারের জন্য খাদ্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মনজুর কাদির আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খরচ কতটা যৌক্তিক হবে, এটা নিয়ে প্রশ্ন রাখতে চাই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য যে টাকা খরচ হবে, সেই টাকা এইসব গরিব ও অসহায় মানুষের ঈদের খরচের জন্য দিলে সব থেকে বেশি ভালো হবে। এতে দশ লাখ মানুষের জমায়েতের থেকে বেশি প্রচারণা হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার দেশের দরিদ্র মানুষ কুরবানির ঈদে কোনো ধরনের আনন্দ করতে পারবে না। অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায়, ঈদের দিনে এসব মানুষের চোখে থাকবে পানি। প্রায় তিন কোটি মানুষ এবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। উদ্যোগ নিলে তিন কোটি মানুষকে হয়তো খাবার দেওয়া যাবে না। তবে কয়েক লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। তাই আমরা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশ থেকে ৫৩ হাজার মানুষ মক্কায় গেছেন হজ করতে। তারা যদি ১০ হাজার টাকা করে দান করেন, তাহলে ছয় লাখ পরিবার ঈদের তিনটা দিন ভালোভাবে অতিবাহিত করতে পারবে। এতে আমার মনে হয়, আল্লাহ বেশি খুশি হবেন। দেশের বিত্তবান ও ব্যবসায়ীসহ বিকাশ ব্যবহারকারীদের কাছেও সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরাও তাদের বেতন থেকে শতকরা ৫ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হয়েছে। কিন্তু ২০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিতে দরকার আরও দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা সমাজের নানা স্তরের মানুষের থেকে সংগ্রহের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে টাকা ব্যয় হয়েছে সেটা তুলতে টোল ধরা হয়েছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে এই সেতুর উপর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিলে সব থেকে বেশি ভালো হবে। আর এই সেতুর উপর দিয়ে যেসব বিদেশি ট্রাক চলাচল করবে, সেসব পরিবহণ থেকে বেশি টাকা টোল আদায় করতে হবে।
পদ্মা সেতু থেকে আয় হওয়া এই অতিরিক্ত টাকা শ্রমিকদের ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা মজুরিতে ব্যয় করার পরামর্শ দেন তিনি।
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ধারা ১৫ ও ২৬- এ জীবন রক্ষার জন্য নির্দেশনা আছে। সুতরাং আমি যেটা মনে করি, এই পদ্মা সেতু উপলক্ষ্য করে, এমনকি ঈদে খালেদা জিয়াকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়। কাজেই এটাকে উপলক্ষ্য করে খালেদা জিয়াকে ঈদে জামিনে মুক্তি দেন। আমি মামলা প্রত্যাহারের কথা বলছি না। জামিনের কথা বলেছি।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, গণস্বাস্থ্য স্বাধীনতার সেই ৭১ পর থেকেই গরিব অসহায়দের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। বিত্তবানদের উচিৎ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবায় এগিয়ে আসা। গত রোজার ঈদেও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র দশ হাজার দরিদ্র পরিবারকে ঈদে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছে। আশা করি এ মহতী কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।