ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে বড় যানজটের আশঙ্কা
সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ক্ষতিগ্রস্ত নলকা সেতু ও মুলিবাড়িতে ডিভাইডার ও কড্ডায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে মহাসড়কে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ শুরু হলে যানজট ও ভোগান্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নলকা সেতুর বিভিন্ন জায়গায় পিচ ও পাথর উঠে রড বেরিয়ে গেছে। ফলে সেতুটি খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুতে মাঝে মধ্যে সংস্কার করলেও বৃষ্টিপাতের কারণে সেতুটির পিচ উঠে এক্সপানশন জয়েন্টগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ধীরগতিতে চলাচল করছে যানবাহন।
অপর দিকে, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়িতে ডিভাইডার ও কড্ডায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এই দুটি জায়গায়ও যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ফলে এই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সিরাজগঞ্জ রোড গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়কে ভোগান্তিতে পড়ছেন উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলার মানুষজন। বিশেষ করে রাতে যানবাহনের চাপ বাড়লে তীব্র হচ্ছে যানজট যা দিনের বেলায়ও অব্যাহত থাকছে।
ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী ট্রাকচালক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘নলকা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। এতে মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়ে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে।’
ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটের এসআই এন্টারপ্রাইজের চালক আলাউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে মহাসড়কের যে অবস্থা তাতে ঈদের আগে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। বিশেষ করে ঝুকিপূর্ণ নলকা সেতু ভোগান্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল অংশ) আহসান মাসুদ বাপ্পি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের পাঁচ দিন আগে ও পাঁচ দিন পরে এই মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এবার ঈদুল ফিতরের আগে (গত ১৩ মে) একদিনে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৫২ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহেল বাকি জানান, নলকা সেতুটি সড়ক বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। সেতুর বিভিন্ন স্থানে পিচ ও পাথর উঠে গেছে। এ কারণে সেতুতে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ঈদের আগে সেতুটি সংস্কার করা না হলে যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। যানজট নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে নলকা সেতু পর্যন্ত সেতু থানার নিয়ন্ত্রণে। এই সংযোগ মহাসড়কের মুলিবাড়িতে ডিভাইডার ও কড্ডায় এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে অধিকাংশ সময় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করায় মাঝে মধ্যে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মূলত নির্মাণকাজের জন্য সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে মুলিবাড়ি ও কড্ডায় আলাদা ডাইভারশন তৈরি করা হচ্ছে। বিকল্প এই ডাইভারশন ব্যবহার শুরু হলে আলাদা আলাদা লেনে যানবাহন চলাচল করবে।
সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম পিকে বলেন, ‘নলকা সেতুটি অনেক দিনের পুরাতন হওয়ায় প্রায় সময়ই সংস্কার কাজ করা হয়। যাতে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে। গত কয়েক দিনে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সেতুর পিচ ঢালাই উঠে গেছে। এ ছাড়া পুরনো ডিজাইনের এই সেতুটির এক্সপানশন জয়েন্টের দূরত্বও একটু বেশি। যার ফলে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত একটু কমলেই সেতুটির সংস্কার কাজ করা হবে।