একনজরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন
বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৮১ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটল। জীবদ্দশায় তিনি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া তিনি দেশে ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ প্রণয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। বহির্বিশ্বে তিনি বিকল্পধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত। নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জন্ম
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ুন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার দশ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।
শিক্ষাজীবন
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাসকুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানান পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড।
মৃত্যু
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর গত রোববার তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।