এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ : আরো তিনজন ৫ দিনের রিমান্ডে
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও আইনুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব হেফাজত থেকে তাঁদের তিনজনকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে তোলা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক এম সাইফুর রহমান পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরে তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজ হেফাজতে নিয়ে যান।
এর আগে গত রোববার রাতে মামলার ৩ নম্বর আসামি মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ছাড়া রোববার দিবাগত রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি এ মামলার অজ্ঞাতপরিচয় তিন আসামির একজন। এ সময় রাজনকে আশ্রয় দেওয়া ও সহযোগিতা করার অভিযোগে আইনুল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে গতকাল সোমবার মাহবুবুর রহমান রনিকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, আসামি রনি যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে তাঁদের মনে হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সন্দেহভাজন রাজন ও আইনুলও জড়িত থাকতে পারে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার হওয়া মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কাছে হাস্তান্তর করেছে সিলেট জেলা পুলিশ।
এর আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউলকে গতকাল পাঁচ দিন করে রিমান্ড দেন আদালত।
গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে সাইফুর রহমান ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রাতে এ মামলার আরেক আসামি রবিউল ইসলামকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন তাঁদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে তারা। পরে ওই গৃহবধূকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। তাঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়।
অভিযোগ উঠেছে, মামলার এই ছয় আসামি ছাত্রলীগের কর্মী। এ বিষয়ে ওসি আবদুল কাইয়ুম জানান, মামলায় ছয়জনকে সরাসরি জড়িত বলে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে তাঁদের ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি এম সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি রামদা, একটি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়।