‘এমাজউদ্দীন স্যার উদার গণতন্ত্রমনা বড় মাপের মানুষ ছিলেন’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক।
প্রথিতযশা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘শুধু শিক্ষাবিদই নন, এমাজউদ্দীন স্যার একজন উদার গণতন্ত্রমনা বড় মাপের মানুষ ছিলেন। নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস অটুট রেখেও যে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে দলীয় সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করা যায়, ড. এমাজউদ্দীন ছিলেন তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’ তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান।
আজ শুক্রবার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রয়াত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আজ শুক্রবার বাদ জুমা এমাজউদ্দীন আহমদের বাসাসংলগ্ন কাঁটাবন মসজিদে প্রথম জানাজা হবে। বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্ত্রী সেলিনা আহমদের কবরে দাফন করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শায়রুল কবির খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ দেখা দিলে তাঁকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে নানা গবেষণা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্য দেশ-বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৯২ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহু পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন এই শিক্ষাবিদ।
এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অধিভুক্ত মালদাহ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে অবিভক্ত মালদার গোলাপগঞ্জ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করেন। স্নাতকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। দুটি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। এরই ফাঁকে ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন।
প্রায় আড়াই দশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি পালন করেছেন প্রতিটি প্রশাসনিক দায়িত্বও। ছিলেন বিভাগীয় প্রধান, মুহসীন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টর, উপ-উপাচার্য ও সবশেষে উপাচার্য। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ছয় বছরের কর্মবিরতি শেষে ২০০২ সালে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের উপাচার্য পদে।
ড. এমাজউদ্দীন আহমদ পিএইচডি করেছেন ১৯৭৭ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আশির দশকে তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কলেজ ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র ফেলো ছিলেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখির জন্যও এমাজউদ্দীন আহমদ খুব পরিচিত। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে লিখেছেন ৫০টির বেশি বই। নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি। জাতিসংঘের ৪১তম অধিবেশনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক।
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ দেশ ও বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। সৃষ্টিশীল গবেষণা ও আলেখ্য রচনার জন্য ‘মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণপদক’, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, জিয়া সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক অর্জন করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৯২ সালে একুশে পদক, মাইকেল মধুসূদন দত্ত গোল্ড মডেল, শেরেবাংলা স্মৃতি স্বর্ণপদক, ঢাকা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ যুব ফ্রন্ট গোল্ড মেডেল, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।