কোরবানির মাংস আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্যের হামলা
ঝিনাইদহে দরিদ্রদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বিরুদ্ধে। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সেখানে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইমরান ও তাঁর ছোট ভাই।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুর রহমান ও তাঁর লোকজন এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এইচ এম ইমরান হোসেন।
হামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও সেটি ভুল বোঝাবুঝি বলে জানান অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্য।
ইমরান হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঈদের দিন ওই এলাকায় অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য জনগণ থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করা হয়। মাংস বিতরণ শেষে প্রায় ২০ কেজি মাংস আজিজুর একজন সচ্ছল সাবলম্বী জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে রেখে দেন। তাঁর (ইমরান) বাবা প্রতিবাদ করলে বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। পরে ইমরান ও তাঁর ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসাইন এগিয়ে গেলে ইউপি সদস্য আজিজুর তাঁর দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ইমরান ও তাঁর ছোট ভাই আকরাম হোসাইন গুরুতর আহত হন।
এতে ইমরানের মাথা ফেঁটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। ছোট ভাই আকরাম হোসাইনেরও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। তাঁরা সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
ইমরান হোসেন বলেন, ‘কোরবানির মাংসও লুট করতে হবে? ভাবতে অবাক লাগে। উদ্বৃত্ত মাংস থেকে আধা কেজি করে বাড়িয়ে বিতরণ করলেও প্রায় ৪০টি পরিবার যেখানে ঈদের দিন অন্তত পুষ্টিকর প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের তৃপ্তি পেত, যা কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। অথচ মেম্বার তা নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের পরিবারের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে।’
হামলায় ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান ও তাঁর ছেলে সরাসরি অংশ নেন বলে জানান ইমরান। বিকেলে এ ব্যাপারে মহেশপুর থানায় মামলা করা হয় বলে জানান তিনি।
মামলার আসামিরা হলেন আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ (৫৭), তাঁর ছেলে সাগর হোসেন (২২) ও ইউনিয়নের গাড়াপোড়া গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন (৩৫)। এ ছাড়া অজ্ঞাত ছয়-সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গরিবের মাংস আমি নিজে আত্মসাৎ করব, অসম্ভব ব্যাপার। ওই মাংস আমি নিজের জন্য নেইনি। মাংস বিতরণ শেষে ১৩ প্যাকেট থেকে যায়। আমরা সেগুলো গ্রামের অন্য পাড়ায় গরিবদের জন্য বিতরণের জন্য নিয়ে যাই। পথে ইমরানের বাবা তাঁর আত্মীয়ের কথা বলে দুই প্যাকেট মাংস নিয়ে নেন। পরে বক্স থেকে আরো এক প্যাকেট নিজ হাতে নিয়ে যান। লোকজন এটার প্রতিবাদ করলে তিনি গরিবের হক মাটিতে ফেলে দেন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে।’
হামলার বিষয়ে আজিজুর বলেন, ‘আমি হামলা করিনি। এলাকার অনেকই তাদের মারধর করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে হামলাকারীরা তাঁর দলের লোক বলে স্বীকার করেন আজিজুর। পরে তিনি ঘটনাটি মীমাংসা করবেন বলে জানান।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ হোসাইন খান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। এটার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিবাদ
সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ (ডুজা) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ডুজার সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবিরের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর আস্থা ও ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইমরানের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপনপূর্বক সংগঠনটি ধিক্কার জানাচ্ছে। এর সাথে প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছে, দ্রুত জড়িত ইউপি সদস্য আজিজুর ও তাঁর সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার। অন্যথায়, বাংলাদেশের অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ক্যাম্পাস জার্নালিস্টস ফেডারেশন’র সদস্য সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রেখেই স্থানীয় এবং দেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে বলছি, দাবি আদায়ে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না, যাতে দেশব্যাপী এই করোনা সংকটের ভেতরেও জনগণের জীবনযাত্রা ব্যহত হয়।
এছাড়া এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।