গেন্ডারিয়ায় ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ রক্ষায় সরকারকে আইনি নোটিশ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ রক্ষায় আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সমমনা ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও একজন বিশিষ্ট নাগরিক। প্রেরিত এ নোটিশের মাধ্যমে মাঠটি জনস্বার্থে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাসমূহ। অননুমোদিত ও বেআইনিভাবে শুরু হওয়া মার্কেট নির্মাণের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে মাঠটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে এ নোটিশে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র; ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ৪৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
নোটিশটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), নিজেরা করি, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্লাস্ট, নাগরিক উদ্যোগ, গ্রীন ভয়েস এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন-এর পক্ষে স্বাক্ষর করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ৭ দশমিক ৪৭ একর আয়তন বিশিষ্ট পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ যা ঢাকা মহানগরীর সর্ববৃহৎ মাঠ। এ মাঠে পুরান ঢাকার সাতটি থানা এলাকার শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করে। এটি শুধু একটি খেলার জায়গাই নয়, আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা, বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অবসর সময় কাটানোর জন্যও এ মাঠে যান। ধূপখোলা মাঠটি ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্য ও গর্বের একটি অংশ। এ মাঠে বাংলাদেশের জাতীয় দলের বেশকিছু খেলোয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখনো প্রতি বছরই ধূপখোলা মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হয়। মাটটি মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। এর একটি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাকি দুটি অংশ ইস্ট এ- ক্লাব মাঠ ও স্থানীয় খেলার মাঠ। তিনটি অংশের প্রত্যেকটি আকারে একটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড়। ২০১৬ সালে মাঠে একটি বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাধ্য হয়ে গণশুনানির আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তাতে এলাকাবাসী বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে ধূপখোলা মাঠ রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেন। গণদাবির মুখে বাণিজ্যিক শিশুপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও বর্তমানে মাঠটিতে গ্যালারিসহ খেলার মাঠ ও শিশু কর্নার এবং একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। প্রবল জনআপত্তি ও আন্দোলনের ফলে প্রকল্পের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখলেও ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই মাঠের ভেতরে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে একটি বহুতল মার্কেট তৈরির কাজ শুরু করেছে।
বলা হচ্ছে এটি মাঠ উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ। এ মার্কেটের কারণে মাঠের মোট শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ জায়গা কমে যাবে। বহুতল মার্কেটটি ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মাঠটিতে হাঁটার রাস্তা, বসার ব্যবস্থা, পার্কিং জোন, একটি ক্যাফেটেরিয়া ও শিশুদের জন্য একটি আলাদা জোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে মাঠের জায়গা আরও কমবে। কথিত উন্নয়ন কাজের ফলে ফুটবল মাঠের আকার ৭ দশমিক ৪৭ একর থেকে ৪ দশমিক ০১ একরে নেমে আসবে। এর ফলে উন্মুক্ত ও জনসাধারণের ব্যবহৃত অবস্থান হিসেবে মাঠের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোই হারিয়ে যাবে আর সাথে হারাবে এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য যেন কোনোভাবেই হারিয়ে না যায় এবং ঐতিহাসিক ধূপখোলা মাঠ যেন মাঠ হিসেবেই ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকে সে উদ্দেশ্যেই এ নোটিশ প্রেরিত হয়েছে।