চিকিৎসক-নার্স লাঞ্ছিতের ঘটনায় কাউন্সিলরের জামিন নামঞ্জুর
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক-কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি পৌরসভার কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহের জামিন আবেদন আবারও না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রোববার সকালে আপিল আবেদনের শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল করিম কাউন্সিলরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে কাউন্সিলর মো. মাহফুজুর রহমান শাহকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ১ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা শহরের টুপির মোড় এলাকার আবু হানিফা (৫৭) নামে এক রোগীকে বুকের ব্যথাজনিত কারণে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। এ সময় সম্ভাব্য সব চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময় ওই রোগী মারা যান। মৃতের স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তাদের সঙ্গে আসা নীলফামারী পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাহফুজুর রহমান শাহ জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে অ্যাম্বুলেন্সচালক আনোয়ার হোসেনকে মারধর করে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়ের ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তাদের শারীরিকভাবে হেনস্তা ও সরকারি কাজে বাধা দেন।
এ ঘটনায় ২ আগস্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু-আল-হাজ্জাজ বাদী হয়ে পৌর কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
মামলার পর থেকে মাহফুজুর রহমান শাহ পলাতক থাকার পর ১৬ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন। এর আগে আসামি গ্রেপ্তারের দাবিতে চিকিৎসক-কর্মচারীরা শহরে মানববন্ধন, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
জেলা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহ উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে উচ্চআদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন না আসায় বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
এরই মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন আসে। ৩১ অক্টোবর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে সময় প্রার্থনা করেন পৌর কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহ। বিচারক আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তার সময় প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
গত ১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ মো. শাহিন কবিরের আদালতে স্থানান্তর করা হয়।
১৪ নভেম্বরের জামিন না মঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হয়। ২০ নভেম্বর ওই আপিল আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। ধার্য তারিখে উভয় পক্ষের আইনজীবীর শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল করিম আসামি পৌর কাউন্সিলরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন, মো. আনিছুজ্জামান। সরকার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন পিপি অক্ষয় কুমার রায়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী নূরুল জাকি স্টালিন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে আসামি গত ২৬ সেপ্টেম্বর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন না আসায় বিচারক জামিন প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। ৩১ অক্টোবর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করে সময় প্রার্থনা করলে সেদিনও তাকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন আদালত।
১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. হাফিজুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবারও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন আসামির আইনজীবী। সেই আপিল আবেদনও নামঞ্জুর করেন বিচারক মো. মাহমুদুল করিম।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধা এবং চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে গত ২ আগস্ট পৌর কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার অভিযোগপত্র প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’