‘ছাগল-গরু থুয়ি কনে যাব, মরি গিলি গেলাম’
‘সবাই স্কুলে আর মসজিদে যাতি বলতি (যেতে বলেছে)। তা গরু-ছাগল থুয়ে কনে যাব? যাতিচ্ছি করে না। সবার মুখে জগমালা। আগের ঝড়ের (আম্পান) চেয়ি বেশি হবে এবার। হোক, আল্লাহর পর নির্ভর। আল্লাহ বাঁচাইলে কেউ মারতি পারবে না।’
আগামী বুধবার দুপুরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ভারতের ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তারপর ঝাড়খণ্ডের দিকে এগিয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড়। ইয়াসের ভয় জেঁকে বসেছে বাংলাদেশেও। অনেককে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে নানাভাবে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের বেলী গ্রামের জোহরা বেগম মুঠোফোনে এসব কথা বলছিলেন।
গত বছরের ২০ মে সন্ধ্যা থেকে রাতভর কলারোয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এ রকম ভয়াবহ তাণ্ডব পুরো সাতক্ষীরাবাসী বিগত ২০০ বছরের মধ্যে দেখেনি। আম্পানের প্রসঙ্গ টেনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জোহরার। সে সময় আম্পানের কথা মনে করে স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
জোহরা বেগম বলেন, ‘গত বছর ঝড়ের (আম্পান) রাতে আমরা কদরের নামাজ পড়তি পারিনি। বিশাল ঝড়। মনে হতিলো, সব ভেঙে-চুরে যেতিছে। এবার শুনছি আরও বেশি ঝড় হবে। যাইহোক, বাড়ি ঘদ্দোরে থাকব। মরে গিলি মরে যাব। ছাগল-গরু রেখে গেলাম, বাড়ি-ঘর কই রেখে যাব? আল্লাহর নামে বাড়িতেই থাকব।’
আম্পানে কলারোয়া উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার আবার ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে সেই কলারোয়ায় মাত্র দুটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। তবে উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী।
কলারোয়ার সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মজনু রহমান। তিনি একজন আম ব্যবসায়ী। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুনেছি, ঝড় বেশি হবে। কিন্তু বেশি ভেবে আর কী হবে? যা করার আল্লাহ করবেন। মরণ লেখা থাকলে সিন্দুকের ভেতরে থাকলেও হবে। সুতরাং বেশি ভাবনার কিছু নেই। গত বছর আম্পান ঝড়ে আমার কয়েকটি বাগানের আম সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবার অবশ্য মাঠের বাগানের আমগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। যদিও এখনও বাড়ির বাগানে ভরা আম। এগুলো নিয়ে ভাবছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে। আল্লাহ হেফাজত করবেন।’
একই ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা নূর হোসেন। তিনি বলেন, ‘সবাই বলাবলি করছে বেশি ঝড় হবে। ভারতের চ্যানেলে দেখছি, ১৬০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হচ্ছে। এমনটা আমাদের এখানে হলে কী হবে আল্লাহ জানে। সরকারিভাবে কিছু না বললেও আমাদের মসজিদে বারবার বলছে, ঝড় শুরু হওয়ার আগে যেন ছাদের ঘরে অবস্থান নেয় সবাই। আম্পান ঝড়ের পর মানুষের মনে হয় ভয় কেটে গেছে। প্রায় সবাই যার যার বাড়িতেই থাকবে।’
কলারোয়ার ইউএনও জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলার দেয়াড়া ও কয়লা, এ দুই ইউনিয়নে দুটি আশ্রয় কেন্দ্র করেছি। আর উপজেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তেমন কোনো সংকেত পেলে আমরা অবশ্যই সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেব।’